- JustPaste.it

- JustPaste.it

Source

‘তুমি এবং তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও, আর আমার যিকির থেকে গাফেল হয়ো না। (সূরা ত্বহা 20: 42)

أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ ۗ أَإِلَـٰهٌ مَّعَ اللَّـهِ ۚ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ ﴿তওবা-ইস্তেগফার

গুনাহ থেকে তওবা এবং ইস্তেগফারের পাবন্দি বান্দাকে ফিতনা ও বিপদ-আপদের সময় সাহায্য করে, তার ভিতরে শক্তি পয়দা করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ ﴿﴾

‘সালেহ আ. বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা কল্যাণের পূর্বে দ্রুত কেন অকল্যাণ কামনা করছ? তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না কেন? সম্ভবত তোমরা দয়া প্রাপ্ত হবে।’ সূরা নামল 27:৪৬

وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖ وَإِن تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ ﴿﴾

‘আর হে আমার কওম, তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বারিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।’ -সূরা হুদ ১১:৫২

নূহ আ. সম্পর্কে আল্লাহর বাণী,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا

অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (﴾

‘অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না।’ সূরা আনফাল 8:৩৩

ইমাম তবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণনা করেন,

وما كان الله ليعذبهم

وأنت فيهم وما كان الله معذبهم وهم يستغفرون

এ আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু ইস্তেগফার তোমাদের মাঝে কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে।’ -তাফসীরে তবারী: ১৩/৫১৩

ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘পরিচ্ছেদ: وما كان الله ليعذبهم وأنت فيهم وما كان الله معذبهم وهم يستغفرون প্রসঙ্গ। এ আয়াতের উপর দু’টি বিষয়ে আলোচনা করা যায়:

এক. আযাব প্রতিহতকারী ইস্তেগফার

আযাব আসে গোনাহের কারণে। আর ইস্তেগফার এমন গুনাহকে মিটিয়ে দেয়, যার কারণে আযাব সুনিশ্চিত। বুঝা গেল, ইস্তেগফারের মাধ্যমে আযাব দূর হয়। আল্লাহ বাণী,

الر ۚ كِتَابٌ أُحْكِمَتْ آيَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ ﴿﴾ وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖ وَإِن تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ ﴿﴾

‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সূরা হুদ ১১׃৫২)

এটা এজন্য যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ ﴿

 আল্লাহর বাণী,

‘أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّى هَـذَا قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنْفُسِكُمْ إِنَّ اللّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

যখন তোমাদের উপর একটি মুসীবত এসে পৌছাল, অথচ তোমরা তার পূর্বেই দ্বিগুণ কষ্টে পৌছে গিয়েছ, তখন কি তোমরা বলবে, এটা কোথা থেকে এল? তাহলে বলে দাও, এ কষ্ট তোমাদের উপর পৌছেছে তোমারই পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাশীল। (সূরা ইমরান ৩;১৬৫)

আল্লাহর বাণী

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ (30)

‘যদি তোমাদেরকে কোনো মসিবত স্পর্শ করে তাহলে তা তোমাদের কর্মফল। (সূরা আশ-শুরা ৪২׃৩০)

দুই. ইস্তেগফারের মাধ্যমে প্রতিহত আযাব

প্রতিহত আযাবটি আসমানি আযাব হতে পারে, মানুষের পক্ষ থেকেও হতে পারে। তবে আল্লাহ তা’আলা উভয়টিকেই আযাব বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহর বাণী,

وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ ﴿﴾

‘আপনি বলুন, তোমরা তো তোমাদের জন্য দু’টি কল্যাণের একটি প্রত্যাশা কর; আর আমরা অপেক্ষায় আছি তোমাদের জন্য, আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাতে।’ (সূরা তওবা 9: ৫২)

কেননা আযাব আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, মানুষের পক্ষ থেকেও হয়। আল্লাহ পাক বলেন,

قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ َ

‘তাদের সাথে কিতাল কর, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদের বিপক্ষে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।’ (সূরা আত-তাওবা ৯׃১৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ‏

‘যে ইস্তেগফারকে নিজের জন্য আবশ্যকীয় বস্তু হিসাবে নির্ধারণ করে নিয়েছে আল্লাহ তা’আলা তার সকল সমস্যা সমাধানের পথ বের করে দেন, তাকে চিন্তামুক্ত করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করত না।’ –(আবু দাউদ, আলবানী রহ. এর মতে হাদিসটির সনদগত মান ‘জঈফ’, তবে তার অর্থ সঠিক।)

আমর বিল মারূফ, নাহি আনিল মুনকার এবং হকের দাওয়াত

ফিতনার জমানায় মুক্তির যে সব পথ শরীয়ত কর্তৃক বর্ণিত তা হচ্ছে, সৎপথের নসিহত, আমর বিল মা’রূফ, নাহি আনিল মুনকার। এসব আমল ব্যক্তি ও সমাজকে ফিতনার জমানায় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষ করার উপযুক্ত মাধ্যম। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ ۗ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ ﴿﴾

‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ -সূরা তাওবা 9:৭১

 সুতরাং আল্লাহর রহমত ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের উপর বর্ষিত হয়। আর আমর বিল মা’রূফ, নাহি আনিল মুনকার অবশ্যই একটি সৎকর্ম।

আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ,

وَاسْأَلْهُمْ عَنِ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِي السَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ ﴿﴾ فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ ﴿﴾

‘আর তাদের কাছে সে জনপদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যা ছিল নদীর তীরে অবস্থিত। যখন শনিবার দিনের নির্দেশের ব্যাপারে সীমাতিক্রম করতে লাগল, যখন আসতে লাগল মাছগুলো তাদের কাছে শনিবার দিন পানির উপর, আর যেদিন শনিবার হতো না, আসত না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ, তারা ছিল নাফরমান। আর যখন তাদের মধ্য থেকে এক সম্প্রদায় বলল, কেন সে লোকদের সদুপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে চান কিংবা আযাব দিতে চান কঠিন আযাব? সে বলল, তোমাদের পালনকর্তার সামনে দোষ ফুরাবার জন্য এবং এ জন্য যেন তারা ভীত হয়। অতঃপর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বোঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানীর দরুন। তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’ -সূরা আরাফ 7: ১৬৩-1৬৬

সায়্যিদ কুতুব রহ. এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেন,

‘সুতরাং এটা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব, আমরা তা আদায় করব। সৎ কাজের আদেশ করব, অসৎ কাজ থেকে বারণ করব; আল্লাহর বিধিবিধান লঙ্ঘন করার ভয় দেখাব। যাতে করে আল্লাহর কাছে আমরা ওযরখাহী করতে পারি। তিনি যেন জানেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পূরণ করেছি। তাহলে হতে পারে এসব কঠিন হৃদয়ে নসিহতগুলো কাজে লাগবে, তাকওয়ার উপলব্ধি আসবে।

শহরের লোকজন তিন শ্রেণী বা তিন জাতিতে বিভক্ত। ইসলামী পরিভাষায় সেসব মানুষের সমষ্টিকে উম্মত বলা হয়, যারা আকিদা ও চলন-বলনে এক ধর্মের, যাদের নেতৃত্বও এক। অতীত বা বর্তমান জাহেলী মতবাদ যে সংজ্ঞা উপস্থাপন করে সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। জাহেলী সংজ্ঞা হচ্ছে, মানুষের এমন সমষ্টি, যারা এক ভূখণ্ডে বাস করে, যাদেরকে এক সরকার শাসন করে। এটা এমন বুঝ যাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এটা অতীত বা বর্তমান কোনো জাহেলী পরিভাষা হবে। আবার কখনো এক গ্রামের অধিবাসীই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত থাকে। এক শ্রেণী আছে, যারা গুনাহগার প্রতারক। আরেক শ্রেণী আছে যারা অস্বীকৃত, ব্যাখ্যা, নসিহতের মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গুনাহ ও প্রতারণার পথে চলে। তৃতীয় প্রকার হচ্ছে যারা মুনকার ও আহলে মুনকারকে ছেড়ে দিয়ে নেতিবাচক অস্বীকৃতির যায়গায় অবস্থান করে; কিন্তু তাকে ইতিবাচক আমলের মাধ্যমে দূর করে না। এগুলো কাল্পনিক অনেক পথ ও পদ্ধতি, যা তিন শ্রেণীকে তিন জাতিতে পরিণত করেছে। সুতরাং যখন সে উপদেশ খোঁজে পায় না, নসিহত তার কোনো কাজে আসে না এবং সে বিভ্রান্তির মাঝেই চলতে থাকে তখন আল্লাহর কালিমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হয়।          যারা অন্যায়কে বারণ করে তাদেরকে রক্ষা করা হয়, আর অবাধ্য কাফেরদেরকে কঠিন আযাব দ্বারা পাকড়াও করা হয়। অপর দিকে তৃতীয় প্রকার লোক বা জাতি যাদের ব্যাপারে কুরআনে কারিম নীরব- তাদের বিষয়টি হালকাভবে নিয়ে যদিও তাদেরকে আযাবের দ্বারা পাকড়াও করা হবে না; কারণ তারা ইতিবাচক অস্বীকৃতিকে উপেক্ষা করে নেতিবাচক অস্বীকৃতির সীমায় অবস্থান করেছে, তারপরও তারা অবহেলার উপযুক্ত, যদিও শাস্তি দেয়া হবে না।

فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ ﴿

‘অতঃপর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বুঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানীর দরুন। তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে, যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’ -সূরা আরাফ 7: 165-১৬৬

কুরআনী নস যে অবাধ্যতার কথা উল্লেখ করেছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য কুফর। যাকে কোনো সময় যুল্ম শব্দে কখনো ফিস্ক শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমনিভাবে কুফর-শিরককে কুরআনের ভাষায় অধিকাংশ জায়গায় যুল্ম ও ফিস্ক শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এগুলো এমন কিছু শব্দ যা পরবর্তী ফিকহী পরিভাষার বিপরীত। কারণ, কুরআন যে অর্থটি উদ্দেশ্য করেছে তা পরবর্তীতে ফিকহী আন্দাজে প্রকাশিত অর্থের সাথে হুবহু মিল নেই। সুতরাং উল্লিখিত আয়াতে কঠিন শাস্তি যা ধূর্ত অবাধ্যদের উপর আরোপিত হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানবাকৃতি থেকে বানরাকৃতিতে পরিণত হওয়া। যখন তারা মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে তখন মনুষ্যত্বও হারিয়েছে। তারা পশুর জগতে পারি জমিয়েছে যখন মানুষের গুণকে পদদলিত করেছে। তাদেরকে বলা হলো, তারা নিজেদের জন্য যেভাবে লাঞ্ছনা ও অবমাননার ইচ্ছা করছে সেভাবে যেন হয়ে যায়। সুতরাং কীভাবে তারা বানরে পরিণত হল? বানর হওয়ার পর তাদের কী হল? তারা কি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল যেভাবে প্রত্যেক বিকৃত জিনিস তার জাতি থেকে বেরিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়? নাকি বানর থাকা অবস্থায় তাদের বংশানুক্রম চলতে থাকে? ........ এসব বিষয়ে তাফসীরে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এসব ব্যাপারে কুরআনুল কারিম নীরব। হাদিসে রাসূলেও এ ব্যাপারে কোনো কিছু বর্ণিত হয়নি। অতএব, এ জাতীয় ব্যাপার নিয়ে আমাদের তলিয়ে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই।’ - ফী যিলালিল্ কুরআন:৩/১৩৮৪

হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত:

عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ عُمَرَ فَقَالَ أَيُّكُمْ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ الْفِتَنَ فَقَالَ قَوْمٌ نَحْنُ سَمِعْنَاهُ ‏.‏ فَقَالَ لَعَلَّكُمْ تَعْنُونَ فِتْنَةَ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَجَارِهِ قَالُوا أَجَلْ ‏.‏ قَالَ تِلْكَ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ وَلَكِنْ أَيُّكُمْ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ الْفِتَنَ الَّتِي تَمُوجُ مَوْجَ الْبَحْرِ قَالَ حُذَيْفَةُ فَأَسْكَتَ الْقَوْمُ فَقُلْتُ أَنَا ‏.‏ قَالَ أَنْتَ لِلَّهِ أَبُوكَ ‏.‏ قَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ حُذَيْفَةُ وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا يُوشِكُ أَنْ يُكْسَرَ ‏.‏ قَالَ عُمَرُ أَكَسْرًا لاَ أَبَا لَكَ فَلَوْ أَنَّهُ فُتِحَ لَعَلَّهُ كَانَ يُعَادُ ‏.‏ قُلْتُ لاَ بَلْ يُكْسَرُ ‏.‏ وَحَدَّثْتُهُ أَنَّ ذَلِكَ الْبَابَ رَجُلٌ يُقْتَلُ أَوْ يَمُوتُ ‏.‏ حَدِيثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ ‏.‏ قَالَ أَبُو خَالِدٍ فَقُلْتُ لِسَعْدٍ يَا أَبَا مَالِكٍ مَا أَسْوَدُ مُرْبَادًّا قَالَ شِدَّةُ الْبَيَاضِ فِي سَوَادٍ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ فَمَا الْكُوزُ مُجَخِّيًا قَالَ مَنْكُوسًا ‏.‏

অর্থ:হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন আমরা উমর রা. এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছ? উপস্থিত একদল বললেন, আমরা শুনেছি। উমর রা. বললেন, তোমরা হয়ত একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা মনে করেছ। তারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই। তিনি বললেন, সালাত, রোযা ও সাদকার মাধ্যমে এগুলোর কাফফরা হয়ে যায়। উমর রা. বললেন, না! আমি জানতে চেয়েছি, তোমাদের কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে বৃহৎ ফিতনার কথা আলোচনা করতে শুনেছে, যা সমুদ্র তরঙ্গের মত ধেয়ে আসবে? হুযাইফা রা. বলেন, প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, আমি শুনেছি। উমর রা. বললেন, তুমি শুনেছ, মা-শা আল্লাহ। হুযাইফা রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মতো এক এক করে ফিতনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায়, তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান কবে, তাতে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়বে। এমনি করে দুটি অন্তর দু’ধরণের হয়ে যায়। একটি শ্বেত পাথরের মত; আসমান ও জমিন যতদিন থাকবে ততদিন কোনো ফিতনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো কালো কলসির মত, প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা সেধে দিয়েছে তা ছাড়া ভাল-মন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না। হুযাইফা রা. বলেন, উমর রা.-কে আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। অচিরেই সেটি ভেঙে ফেলা হবে। উমর রা. বললেন, সর্বনাশ! তবু ভেঙে ফেলা হবে? যদি ভেঙে ফেলা না হতো, তাহলে হয়ত পুনরায় বন্ধ করা যেত। হুযাইফা রা. উত্তর করলেন, না ভেঙে ফেলাই হবে। হযাইফা রা. বলেন, আমি উমর রা.-কে এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হলো একজন মানুষ; সে নিহত হবে কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবে। এটি কোনো গল্প নয় বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস। বর্ণনাকারী আবু খালিদ বলেন, আমি সা’দকে জিজ্ঞেস করলাম, এর অর্থ কী? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কালো-সাদায় মিশ্রিত রং’। আমি বললাম, এর অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘উল্টানো কলসি’।’ - মুসলিম:১৪৪

নু’মান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত।

عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَثَلُ الْقَائِمِ عَلَى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا كَمَثَلِ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا عَلَى سَفِينَةٍ، فَأَصَابَ بَعْضُهُمْ أَعْلاَهَا وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا، فَكَانَ الَّذِينَ فِي أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوْا مِنَ الْمَاءِ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقَهُمْ فَقَالُوا لَوْ أَنَّا خَرَقْنَا فِي نَصِيبِنَا خَرْقًا، وَلَمْ نُؤْذِ مَنْ فَوْقَنَا‏.‏ فَإِنْ يَتْرُكُوهُمْ وَمَا أَرَادُوا هَلَكُوا جَمِيعًا، وَإِنْ أَخَذُوا عَلَى أَيْدِيهِمْ نَجَوْا وَنَجَوْا جَمِيعًا ‏

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে তাতে সীমালঙ্ঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিলো। তাদের কেউ স্থান পেল উপর তলায় আর কেউ নীচ তলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল উপর তলায়)। কাজেই নীচতলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে উপর তলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচতলার লোকেরা বলল, উপর তলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নেই (তবে ভালো হয়)। এমতাবস্থায় তারা যদি এদেরকে আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে।’ -বুখারী: ২৪৯৩

সুতরাং যখন ফিতনা ও অবাধ্যতা ছেয়ে যায় এবং সমাজে তার বিস্তৃতি ঘটে তখন ‘আমর বিল মা’রূফ, নাহি আ’নিল মুনকার’ একটি উপযুক্ত মুক্তির পথ ।

রাসূলের অনুসরণ, বিদআত ও কুমন্ত্রণা থেকে সংবরণ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করা, তাঁর অনুসরণ না করা ফিতনার বড় একটি কারণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেমনটি তাঁর মহাগ্রন্থে ইরশাদ করেছেন,

‘যারা তাঁর নির্দেশ অমান্য করে তাদেরকে যেন সতর্ক করে দেয় যে, তাদেরকে ফিতনা গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে আক্রান্ত করবে।’

অপরদিকে হিদায়েত ও জান্নাতে অনুপ্রবেশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।

قُلْ أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُم مَّا حُمِّلْتُمْ ۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا ۚ وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ ﴿﴾

‘রাসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের আহ্বানের মত গণ্য কর না। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব তারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’ -সূরা নূর 24:৬৩

ইলম অন্বেষণ ও রব্বানী আহলে ইলমের দিকে প্রত্যাগমন

মূর্খতা ও ইলম ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা-সমাধানে আত্মনিয়োগ করা ফিতনা ও ভ্রষ্টতায় পতিত হওয়ার বড় একটি কারণ। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا ﴿ইতিহাস অধ্যয়ন করা এবং ঘটনার পরিণাম ও সেখান থেকে পাওয়া কল্যাণ-অকল্যাণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা   

ফিতনার জমানায় বান্দাকে যে বিষয়টি সরল-সঠিক পথে সাহায্য করবে, তা হচ্ছে, এ জাতীয় অন্যান্য ঘটনার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা; পূর্ববর্তীরা এসব বিষয়কে কীভাবে সমাধান করেছেন। এমনিভাবে পরিণাম ও ঘটে যাওয়া বিষয়ের ফলাফল সম্পর্কে ইলম ভিত্তিক সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। সবরকে মুসাব্বাবের উপর পরিপূর্ণভাবে ফিট করা। ধারণা, খেয়াল-খুশি ও সন্দেহের উপর ভিত্তি করে নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ﴿﴾

‘আর আমি রাসূলগণের সব বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যার মাধ্যমে তোমার অন্তরকে মজবুত করেছি। আর এভাবে তোমার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসিহত ও স্মরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে।’ -সূরা হুদ 11:১২০

ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘কাজের পরিণামের প্রতি লক্ষ্য করা শরীয়ত কর্তৃক গৃহীত একটি বিষয়। অনুকূলে হোক বা প্রতিকুলে। কারণ, মুজতাহিদ ইমাম মুকাল্লিফ থেকে প্রকাশিত কোনো কাজের সিদ্ধান্ত শরীয়তগত ভাবে এর পরিণাম কী হতে পারে তার প্রতি লক্ষ্য করা ছাড়া দিতে পারেন না। কল্যাণকর বিষয়কে গ্রহণ করে অকল্যাণ দূর করবেন। তবে কখনো কল্যাণকর বিষয়ে উল্টো প্রতিক্রিয়ায় থাকতে পারে। অথবা ব্যাপারটি এমন যে, কোনো ক্ষতি সাধিত হওয়া বা কোনো উপকার দূরীভূত হওয়ার কারণে শরীয়তসম্মত মনে করা হল না; অথচ তার মাঝে বিপরীত বিধান লুকায়িত রয়েছে। সুতরাং যখন প্রথমটিকে শরীয়ত সম্মত বলা হল, অথচ তখন দেখা গেল, যে ক্ষতিকে দূর করার জন্য মাসলাহাতকে গ্রহণ করা হচ্ছে সে ক্ষতিটি মাসলাহাতের বরাবর বা তার চেয়ে বেশি। এমতাবস্থায় এ বিষয়টিকে শরীয়ত সম্মত বলা যাবে না। এমনিভাবে দ্বিতীয়টিকে যখন শরীয়ত পরিপন্থী বলা হল, অথচ তখন দেখা গেল, এক ক্ষতিকারক বিষয়ের মাধ্যমে এমন এক ক্ষতিকে প্রতিহত করা হলো, যা তার বরাবর বা তার চেয়ে বড়; তাহলে তো তাকে শরীয়ত পরিপন্থী মনে করার কোনো কারণ নেই। এটি ইজতেহাদী একটি বিষয়, কঠিন একটি জায়গা। তবে বিষয়টি মজাদার, পরিণাম প্রশংসনীয় এবং মাকসেদে শরীয়ার অন্তর্ভুক্ত।’ - আল-মুআফাকাত:৪/১৯৪

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘অনুচ্ছেদ: স্থান-কাল, অবস্থা ও প্রেক্ষাপট ভেদে ফতওয়া বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। দুনিয়া ও আখিরাত বিষয়ে বান্দার কল্যাণের উপর শরীয়তের ভিত্তি।’

এটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী একটি অনুচ্ছেদ। এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে শরীয়তের মধ্যে অনেক ভুল-ভ্রান্তি ঢুকে পড়েছে, অনেক সমস্যা ও জটিলতা পরিলক্ষিত হয়েছে, শরীয়তে যার কোনো স্থান নেই। অনেকের এ কথা জানা নেই যে, এ সবের মাধ্যমে মহান শরীয়ত - যার সুউচ্চ চূড়ায় রয়েছে কল্যাণ- তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ, দুনিয়া ও আখিরাতে কুরআনী বিধান ও বান্দার কল্যাণের উপর শরীয়তের ভিত্তি। এটিই সব কিছুর জন্য ইনসাফ, রহমত, কল্যাণ ও হিকমত। যে বিষয় ইনসাফ থেকে বে-ইনসাফে পরিণত হল, রহমতের পরিবর্তে বিপরীত দিকে চলে গেল, কল্যাণের পরিবর্তে ক্ষতিকারক হয়ে গেল, হিকমতের পরিবর্তে খেলনার পাত্রে পরিণত হল- তাহলে বুঝতে হবে তা শরীয়ত নয়। মন্দ বিষয় দূর হওয়ার চারটি পথ:

এক. একটি মন্দ দূর হয়ে বিপরীত আরেকটি তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া।

দুই.  মন্দ বিষয়টি কমে যাওয়া, যদিও পরিপূর্ণভাবে দূর না হয়।



Read Next page

Report Page