- JustPaste.it

- JustPaste.it

Source

তিন. হুবহু আরেকটি মন্দ তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া।

চার. পূর্বের চেয়ে মারাত্মক কোনো মন্দ তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া।

প্রথম দু’টি শরীয়ত কর্তৃক গৃহীত। তৃতীয়টি ইজতেহাদ-যোগ্য।  চতুর্থটি হারাম।’ -ই’লাউল মুআক্কিঈন:৩/৪

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘আদেশ-নিষেধ যদিও কল্যাণ সাধন করা ও ক্ষতিকারক বিষয় দূর করার জন্য নির্ধারিত, তারপরও বাস্তব ময়দান অবশ্যই লক্ষণীয়। আদেশ-নিষেধ দ্বারা যদি কল্যাণ দূর হওয়া বা ক্ষতি সাধিত হওয়ার পরিমাণ বেশি হয় তাহলে তা পালনীয় নয়। বরং উপকারের তুলনায় যখন ক্ষতির দিকটি বেশি হবে তখন তা হারাম। তবে উপকার ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার মাপকাঠি শরীয়ত। মানুষ যখন নসের উপর আমল করতে সক্ষম হবে তখন সেখান থেকে সরবে না। তা না হলে দৃষ্টান্ত ও নজির দেখে ইজতেহাদ করবে। তবে এ ব্যাপারে ভালো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত। এরই উপর ভিত্তি করে আরেকটি বিষয়, যদি কোনো ব্যক্তি বা গুষ্ঠী ভালো ও মন্দ উভয় গুণে গুণী হয়, কিন্তু তাদেরকে কোনোটি থেকে পার্থক্য করা যাচ্ছে না। বরং সকলে উভয়টির সাথে জড়িয়ে পড়ল অথবা সকলে উভয়টিকে ছেড়ে দিল। এমতাবস্থায় তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ করা যাবে না, খারাপ কাজ থেকে বারণও করা যাবে না। যদি অধিকাংশ কাজ ভালো হয় তাহলে ভালো কাজের আদেশ করা হবে, যদিও তার কারণে কিছু মন্দ আসতে পারে। তাদেরকে এমন খারাপ কাজ থেকে বারণ করা যাবে না, যার কারণে তুলনামূলক তার চেয়ে ভালো কাজ হারাতে হয়। তখন এই বারণটা হবে আল্লাহর পথে বাধা প্রদান; আল্লাহর আনুগত্য, আল্লাহর রাসূলে আনুগত্য ও ভালো কাজ বিদূরিত করার নামান্তর। আর যদি খারাপ দিকের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে খারাপ কাজ থেকে বারণ করা হবে। যদিও এর দ্বারা কিছু ভালো দিক ব্যাহত হবে যা খারাপের তুলনায় কম। এমতাবস্থায় ভালো কাজের আদেশ করা, যা তার চেয়ে বড় খারাপ কাজকে ডেকে আনে- তা খারাপ কাজের আদেশ এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। যখন ভালো দিক, খারাপ দিক উভয়টি বরাবর হয়ে যাবে, তখন ভালো কাজের কথা বলা যাবে না, খারাপ কাজ থেকে বারণ করাও যাবে না। এতে কখনো ভালো কাজে আদেশ কল্যাণকর হতে পারে, কখনো খারাপ কাজ থেকে বারণ কল্যাণকর হতে পারে। কখনো আদেশও কল্যাণজনক হবে না, কখনো নিষেধও কল্যাণজনক হবে না। এটা সে সময় যখন ভালো-মন্দ উভয়টি বরাবর হবে।’ -মাজমুউল ফাতওয়া: ২৮/১২৯-১৩০

আমরা এখানে আবারও সে কথার দিকে ইঙ্গিত করছি, যার প্রতি শাইখ ইবনে তাইমিয়া রহ. সতর্ক করেছেন, ‘কিন্তু উপকার ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার মাপকাঠি শরীয়ত। মানুষ যখন নসের উপর আমল করতে সক্ষম হবে তখন সেখান থেকে সরবে না। তা নাহলে দৃষ্টান্ত ও নজির দেখে ইজতেহাদ করবে। তবে নসকে বোঝা ও তদনুযায়ী হুকুম বের করার মত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত।’

এখানে আরো যে বিষয়ে সতর্ক করা উচিৎ তা হলো, যখন দুটি কল্যাণকর বিষয় বিরোধপূর্ণ হবে তখন তুলনামূলক বড়টিকে আমরা গ্রহণ করব। যখন দুটি মন্দ বিষয় পরস্পর বিরোধপূর্ণ দেখা দিবে তখন আমরা ক্ষতির দিক থেকে বড়টিকে দূর করব। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘শরীয়তের ভিত্তি فاتقوا الله ماستطعتم (আল্লাহকে সাধ্যমত ভয় কর)-এর উপর, যা اتقوا الله حق تقاته (আল্লাহকে ভয় করার মত ভয় কর)এর ব্যাখ্যা। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী,( إذا أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم) ‘যখন তোমাদের কোনো কাজের আদেশ করি তখন যথাসম্ভব তা বাস্তবায়ন কর’-এর উপর। এটি বুখারী-মুসলিমের যৌথ রেওয়ায়েত। শরীয়তের ভিত্তি যার উপর তার আরেকটি হচ্ছে, কল্যাণ অর্জন করে তাকে পূর্ণতায় পৌঁছানো; মন্দ বিষয়কে বন্ধ করা এবং তা কমিয়ে নিয়ে আসা। যখন দু‘টি পরস্পর বিরোধপূর্ণ হয়ে যাবে তখন ছোট কল্যাণকে ছেড়ে বড় কল্যাণটি গ্রহণ করতে হবে, বড় ক্ষতিকে দূর করে ছোটটি সয়ে নিতে হবে। এটিই শরীয়তের কথা। যে ব্যক্তি অত্যাচারীকে তার অত্যাচারের কাজে সাহায্য করল সে অন্যায় ও অবাধ্যতার সাহায্যকারী। তবে যে জালিমের কাছে মাজলুমের জুলুমকে লাঘব করার জন্য গেল তাহলে সে মাজলুমের সাহায্যকারী, জালিমের নয়। সে ঐ ব্যক্তির মত যে তার কাছে ঋণী অথবা তার মাল জালিমের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিলো। এর একটি দৃষ্টান্ত, এতিম বা ওয়াকফের ওয়ালির কাছে যদি কোনো জালিম তাদের মাল তলব করে তাহলে সে মাল দেয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ইজতেহাদ করার পর তার কাছে অথবা অন্যের কাছে রক্ষিত তুলনামূলক কম মাল পরিশোধ করবে। তাহলে এ ক্ষেত্রে সে নেককার। আর নেককারদের উপর অভিযোগের কোনো পথ নেই।’ - মাজমুউল ফাতওয়া: ২৮/২৮৪-২৮৫

যে কোনো সংবাদে, যে কোনো ঘটনায় অটল-অবিচল থাকা   

বিভিন্ন সংবাদ, বর্ণনা, আজেবাজে কথা-বার্তা ফিতনার জমানায় বেশি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বান্দার জন্য আবশ্যক সর্বাবস্থায় অটল-অবিচল থাকা। পূর্বেকার একটি প্রবাদ, ‘আজেবাজে বর্ণনা সংবাদের আপদ’। কিছু সংবাদ, কিছু বর্ণনা এমন থাকবে যা সঠিক নয়। কিছু থাকবে এমন, যা বর্ণনাকারী নিজের বুঝ অনুযায়ী বলে, অথচ বাস্তবতা তার বিপরীত। আল্লাহ তা’আলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

হে! মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। [ ﴾ لَّوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَـٰذَا إِفْكٌ مُّبِينٌ ﴿﴾ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِي مَا أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿﴾ وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُم مَّا يَكُونُ لَنَا أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَـٰذَا سُبْحَانَكَ هَـٰذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ ﴿﴾ وَيُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمُ الْآيَاتِ ۚ وَاللَّـهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ﴿﴾ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ وَأَنَّ اللَّـهَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ ﴿ফিতনার জমানায় জবানের অবস্থান   

বান্দাকে সব সময় জবান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ই ফিতনার জমানায় আরো গুরুত্বের সাথে নির্দেশিত। কারণ ফিতনার জমানায় কথার অনেক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যায়। সুতরাং বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ব্যক্তি ফিতনা ও এ-জাতীয় অন্যান্য সমস্যায় জবানকে হেফাজত করবে, ভালো ছাড়া কোনো কথা বলবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ ﴿﴾ مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ ﴿সবর, অবিচলতা, আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ

ফিতনার জমানায় বান্দার জন্য সবর, অবিচলতা ও আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা উচিত। চেষ্টা হলো সবচেয়ে বড় বিষয়। যে এগুলোকে আঁকড়ে ধরতে পারল না, তার পক্ষে ফিতনার মুকাবিলা করা সম্ভব নয়। অনেকেই এমন আছে যারা ফিতনায় ডুবে গেছে- নাউযুবিল্লাহ। এসব কিছু হয়েছে সবর না থাকার কারণে, আল্লাহর ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করার কারণে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

হে মুমিন গণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা ২:১৫৩)

আল্লাহ তা’আলার বাণী,

وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿﴾ أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ﴿﴾ إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا ﴿সহনশীলতা, নম্রতা, দয়া

সহনশীলতা ও নম্রতাকে আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন। যে বান্দা এ দুটি গুণে গুণান্বিত আল্লাহ তা’আলা তার প্রশংসা করেছেন। কারণ, এ দুটি গুণের মাঝে রয়েছে কল্যাণ, সিদ্ধান্ত ও সঠিক মতামত গ্রহণ করতে সহায়ক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশাজ্জ আব্দুল কায়েসকে বললেন,

إن فيك خصلتين يحبهما الله الحلم والأناة

‘তোমার মাঝে দুটি গুণ আছে, যা আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন। তা হচ্ছে সহনশীলতা ও স্থিরতা।’ -সহীহ মুসলিম: ৪০৫৯

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

التَّأنِّي مِن الله، والعَجَلة مِن الشَّيطان

‘স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে।’ -তারগীব: ১৫৭২

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِي شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ

নম্রতা যে কোন বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যে কোন বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে। (অর্থাৎ ‘নম্রতা যার মধ্যে থাকবে, তাকে সুন্দর করে তুলবে। যার থেকে দূর হয়ে যাবে তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বে।’) -সহীহ মুসলিম: ৬৪৯৬

ফিতনা থেকে দূরে থাকা

ফিতনার জমানায় বান্দাকে যে নসিহতটি গ্রহণ করা দরকার, তা হচ্ছে ফিতনা থেকে দূরে থাকা। কারণ, ফিতনা থেকে দূরে থাকার মধ্যে রয়েছে শান্তি ও মুক্তি। অনেক লোক এমন রয়েছে, যারা ফিতনার দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে, ফিতনাকে আলিঙ্গন করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি, যে ফিতনার জমানায় ফিতনা থেকে বেঁচে থাকল, ফিতনা থেকে দূরে থাকল। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّـهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ ﴿﴾

‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহ্বান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুতঃ তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে। আর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাক, যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপর আপতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালিম এবং জেনে রেখো, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর।’ -সূরা আনফাল 8:২৪-২৫

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ وَلَمَنِ ابْتُلِيَ فَصَبَرَ فَوَاهًا

‘সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে ফিতনা থেকে বেঁচে থাকল। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে ফিতনা থেকে বেঁচে থাকল। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে ফিতনা থেকে বেঁচে থাকল। এবং যে ফিতনায় পতিত হয়েও ধৈর্য ধারণ করল। তার জন্য সৌভাগ্য।’ -আবু দাউদ: ৪২৬৩

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

تَكُونُ فِتْنَةٌ النَّائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْيَقْظَانِ وَالْيَقْظَانُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي فَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَسْتَعِذْ

‘ফিতনার জমানায় ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত ব্যক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ, জাগ্রত ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ, দাঁড়ানো ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তি চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে মুক্তির বা আশ্রয়ের কোনো জায়গা পেয়ে যায়, সে যেন আশ্রয় গ্রহণ করে।’ -সহীহ মুসলিম: ২৮৮৬

ইমাম জাওযী রহ. বলেন, ‘যে ফিতনার নিকটবর্তী হয়ে যায়, শান্তি তার থেকে দূরে সরে যায়। যে সবরের দাবি করে, তার দায়ভার তার উপরই বর্তাবে। অনেক দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি আছে যারা দেখতে পায় না।’- সয়দুল খাতের: ৩

তাকওয়া ও ন্যায়ের পথে জামাআত-বদ্ধ হয়ে থাকা, মতবিরোধ ও বিভেদ থেকে দূরে থাকা

যখন ফিতনা শুরু হয়ে যাবে, সে সময় যদি কোনো মুসলিম জামাআত বা দল থাকে তাহলে ন্যায় ও হকের উপর সকলে তাতে জমায়েত হয়ে যাবে। কেননা, ফিতনার জমানায় জামাআত-বদ্ধ হয়ে থাকা, তাকওয়া ও ন্যায়ের পথে সহযোগিতা করা, বিভেদ থেকে দূরে থাকা- এগুলো বান্দাকে ফিতনা থেকে মুক্তিদানে সাহায্য করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ﴿﴾

তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কর না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।-সূরা মায়িদা 5:২

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّـهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿সৎকাজের সামনে মাথা নত করা তখা আনুগত্য করা

“জামাআতকে আঁকড়ে ধরা” এর থেকে আরেকটি শাখাগত বিষয় নির্গত হয়, তা হলো, বিদ্যমান জামাআতের সীমার ভিতরে সৎকাজের সামনে মাথা নত করা। চাই তা ব্যাপক নেতৃত্ব হোক অথবা এমন কোনো দল বা জামাআত হোক যারা সত্যের উপর জমায়েত হয়েছে। কেননা, সৎকাজের সামনে মাথা নত করা- দল ও ব্যক্তিকে ফিতনার মুখোমুখি হওয়া ও ফিতনা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধতার ভূমিকা রাখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِي فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ عَصَى أَمِيرِي فَقَدْ عَصَانِي.

যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ্‌রই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহ্‌রই নাফরমানী করল। এবং যে আমার (নির্বাচিত) আমীরের আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে আমার (নির্বাচিত) আমীরের নাফরমানী করল সে আমারই নাফরমানী করল।  (-বুখারী-৭১৩৭,মুসলিম)

উক্ত হাদিসের এই আনুগত্যকেই বলা হয় সৎকাজের অনুসরণ। ইমাম মুসলিম রহ. এর হাদিস থেকে যেমনটি আমরা ইঙ্গিত করেছি; আলি রা. থেকে বর্ণিত,

عَنْ عَلِيٍّ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَرِيَّةً وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلاً مِنْ الأَنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ فَغَضِبَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ أَلَيْسَ قَدْ أَمَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُطِيعُونِي قَالُوا بَلَى قَالَ قَدْ عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ لَمَا جَمَعْتُمْ حَطَبًا وَأَوْقَدْتُمْ نَارًا ثُمَّ دَخَلْتُمْ فِيهَا فَجَمَعُوا حَطَبًا فَأَوْقَدُوا نَارًا فَلَمَّا هَمُّوا بِالدُّخُولِ فَقَامَ يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّمَا تَبِعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِرَارًا مِنْ النَّارِ أَفَنَدْخُلُهَا فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ خَمَدَتْ النَّارُ وَسَكَنَ غَضَبُهُ فَذُكِرَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا أَبَدًا إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ.

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদল পাঠালেন এবং একজন আনসারীকে তাঁদের আমীর নিযুক্ত করে সেনাবাহিনীকে তাঁর আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি (‘আমীর) তাদের উপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তোমাদের আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি যে তোমরা কাঠ জড় কর এবং তাতে আগুন জ্বালাও। এরপর তোমরা তাতে প্রবেশ করবে। তারা কাঠ জড় করল এবং তাতে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন প্রবেশ করতে ইচ্ছা করল, তখন একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল। তাঁদের কেউ কেউ বলল, আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্যই তো আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করেছি। তাহলে কি আমরা (সবশেষে) আগুনেই প্রবেশ করব? তাঁদের এসব কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ আগুন নিভে যায়। আর তাঁর (আমীরের) ক্রোধও দমিত হয়ে যায়। এ ঘটনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করতে, তাহলে কোনদিন আর এ থেকে বের হত না। জেনে রেখো! আনুগত্য কেবল বৈধ কাজেই হয়ে থাকে। [বুখারী-৭১৪৫; মুসলিম ৩৩/৮, হাঃ ১৮৪০, আহমাদ ৭২৪]

মুতাশাবিহ (যে সকল বাক্যের অর্থ জটিল এবং কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে সেগুলোকে মুতাশাবিহ বলা হয়) এমন মুতাশাবিহকে মুহকাম (যে সকল বিষয় অকাট্য ও দৃঢ় তাকে মুহ্কাম বলা হয়) এর দিকে ফিরিয়ে দেয়া এবং শরীয়ত-সম্মত ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রতি মনোনিবেশ করা   

ফিতনার জমানায় একটি মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিৎ, তা হল কথা-কাজ ও বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মুহ্কাম তথা যা অকাট্য ও সদৃঢ় তা গ্রহণ করা, মুশকিল ও মুতাশাবিহ (যার অর্থ জটিল ও কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে) এমন বিষয়কে মুহ্কামের দিকে ফিরিয়ে দেয়া। এমনিভাবে ফিতনার সময়কালে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রতি মনোনিবেশ করা।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ كَيْفَ بِكُمْ وَبِزَمَانٍ ‏"‏ ‏.‏ أَوْ ‏"‏ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ زَمَانٌ يُغَرْبَلُ النَّاسُ فِيهِ غَرْبَلَةً تَبْقَى حُثَالَةٌ مِنَ النَّاسِ قَدْ مَرِجَتْ عُهُودُهُمْ وَأَمَانَاتُهُمْ وَاخْتَلَفُوا فَكَانُوا هَكَذَا ‏"‏ ‏.‏ وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَقَالُوا وَكَيْفَ بِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏"‏ تَأْخُذُونَ مَا تَعْرِفُونَ وَتَذَرُونَ مَا تُنْكِرُونَ وَتُقْبِلُونَ عَلَى أَمْرِ خَاصَّتِكُمْ وَتَذَرُونَ أَمْرَ عَامَّتِكُمْ ‏"

‘অচিরেই একটি জামানা আসছে যখন মানুষদেরকে চালনি দিয়ে চালা হবে, সে সময় খরকোটার মত কিছু মানুষ অবশিষ্ট থাকবে। যারা অঙ্গিকার, আমানত নষ্টকারী হবে। সেইসাথে মতবিরোধ করতে করতে এরূপে পরিণত হবে’, (এ কথা বলে) তিনি আঙ্গুলসমূহকে পরস্পর মিলিত করলেন। সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের কী অবস্থা হবে? তিনি বললেন, ‘যা জানা আছে তোমরা তা গ্রহণ করবে এবং যা অপছন্দ মনে হয় তা পরিহার করবে। বিশেষ ব্যক্তিদের নির্দেশ কবুল করবে, আর সাধারণদের নির্দেশ পরিহার করবে।’- আবু দাউদ: ৪৩৪২

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إِنَّمَا كَانَ مَثَلُنَا فِي الْفِتْنَةِ كَمَثَلِ قَوْمٍ كَانُوا يَسِيرُونَ عَلَى جَادَّةٍ يَعْرِفُونَهَا ، فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ غَشِيَتْهُمْ سَحَابَةٌ وَظُلْمَةٌ ، فَأَخَذَ بَعْضُهُمْ يَمِينًا وَشِمَالا فَأَخْطَأَ الطَّرِيقَ ، وَأَقَمْنَا حَيْثُ أَدْرَكَنَا ذَلِكَ حَتَّى جَلَّى اللَّهُ ذَلِكَ عَنَّا ، فَأَبْصَرْنَا طَرِيقَنَا الأَوَّلَ فَعَرَفْنَاهُ وَأَخَذْنَا فِيهِ ، وَإِنَّمَا هَؤُلاءِ فِتْيَانُ قُرَيْشٍ يَقْتَتِلُونَ عَلَى السُّلْطَانِ وَعَلَى هَذِهِ الدُّنْيَا ، مَا أُبَالِي أَنْ يَكُونَ لِي مَا يُفَتِّلُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ الْجَرْدَاوَيْنِ

‘এ ফিতনায় আমাদের উদাহরণ হলো সে জাতির মত, যারা তাদের পরিচিত পথেই চলতে লাগল। এক পর্যায়ে মেঘ ও অন্ধকার এসে তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলল। ফলে কেউ ডানে কেউ বামে চলতে চলতে পথ হারিয়ে ফেলল। আমাদের যখন এমন হলো, আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম। আল্লাহ আমাদের পথ দেখালেন। আমরা প্রথম পথটি দেখে চিনে ফেললাম এবং চলতে থাকলাম। এ হলো কুরাইশী যুবকদল, সুলতানের বিরুদ্ধে, দুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা যদি আমার এ কাপড়ের দু’টি জুতা নিয়ে পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়- আমি তাকে পরওয়া করি না।’ -হিলয়াতুল আওলিয়া: ১/৩০৯

হুযাইফা রা. বলেন, নিশ্চয় ফিতনা কলবের সামনে পেশ করা হয়। যে ফিতনায় জড়িয়ে পড়ে তার অন্তরে একটি কালো দাগ স্থাপিত হয়। আর যে তাকে অস্বীকার করে তার অন্তরে একটি সাদা দাগ পড়ে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার জানতে মনে চায়, তাকে ফিতনায় পেয়ে বসেছে কি না, সে যেন লক্ষ্য রাখে- যদি সে কোনো হারামকে দেখে যা সে হালাল মনে করত অথবা কোনো হালালকে দেখে যা সে হারাম মনে করত। তাহলে বুঝতে হবে তাকে ফিতনায় পেয়ে বসেছে।

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল-কুরাযী থেকে আবুল মিকদাম হিশাম ইবনে যিয়াদ বলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফিতনার আলামত কী? তিনি বললেন, লোকে ভালো জিনিসকে খারাপ মনে করতে শুরু করবে আর খারাপ জিনিসকে ভালো মনে করতে থাকবে।’- হিলয়াতুল আওলিয়া: ৩/২১৪

বর্তমানে মুসলমানরা যে সমস্যার সম্মুখীন, শরঈ শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তার চেয়ে আরো মারাত্মক সমস্যা

এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে আমরা আলোচনার ইতি টানব যে, বর্তমানে মুসলমানরা যে সমস্যার সম্মুখীন, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ থেকে শরঈ শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তার চেয়ে বেশি মারাত্মক ব্যাপার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শরীয়ত বিবর্তনকারী তাগুতদের সাথে মিলে ইসলামকে নিয়ে মুসলমানদের অবহেলা- অনেক ফিতনা ও মসিবত ছড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি অবদান রাখছে। এ ক্ষেত্রে বাস্তব শরঈ বিধানের দাবি কী তা গোপন নয়, সে মাসআলা সূর্যালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এ ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে, আল্লাহর শরীয়তকে শরীয়ত পরিপন্থী অন্যান্য বিধিবিধানের মাধ্যমে পরিবর্তনকারী শাসক স্পষ্ট কাফের। তিনি (আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া-১৩/১৩৯) কিতাবে বলেন, ‘এসবের প্রত্যেকটি আম্বিয়া কেরামের উপর আবর্তিত শরীয়তের পরিপন্থী। সুতরাং যে খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিলকৃত সুসংহত শরীয়তকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো রহিত শরীয়তদারীর কাছে ফায়সালা তলব করল সে কাফের। তাহলে যে ইলয়াসার কাছে ফায়সালা তলব করল এবং মামলা দায়ের করল তার কী অবস্থা? যে এমনটি করবে সে মুসলমানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাফের।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّـهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ ﴿﴾

‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নিবে।’ -সূরা নিসা 4:৬৫

মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম রহ. বলেন, ‘বিশ্ববাসীর মাঝে ফায়সালা করার লক্ষ্যে এবং অসঙ্গতি ও অবাধ্যতায় ঝগড়াকারীদের ঝগড়ার সময় মীমাংসাকারী রূপে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় ভীতি প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে জিবরাইল আ. যা নাযিল করেছেন তার পরিবর্তে অভিশপ্ত নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা স্পষ্টতই সবচেয়ে বড় কুফরি।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّـهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴿﴾

‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নিবে।’ -সূরা নিসা 4:৬৫

আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুধু ফায়সালাকারী রূপে মেনে নেয়াকে যথেষ্ট মনে করেননি; বরং পরবর্তীতে এ বিষয়ে অন্তরে কোনোরূপ সংকোচতা না থাকার বিষয়টিকেও যুক্ত করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না।’ الحرج অর্থ সংকীর্ণতা। বরং এ ব্যাপারে অন্তর থাকবে প্রশস্ত, পেরেশানি ও অস্থিরতা থেকে নিরাপদ।

এখানে আল্লাহ তা’আলা এ দু’টি বিষয় উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি; তার সাথে তাসলীম তথা মেনে নেয়াকেও যুক্ত করেছেন। তা হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা। নফসের সাথে সম্পর্কিত যে কোনো প্রকার সংকীর্ণতা থেকে পবিত্র হবে এবং একে পরিপূর্ণরূপে মেনে নিবে। এখানে তাকীদযুক্ত মাসদার উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, تسليما আবার تسليما শব্দের উপরও যথেষ্ট নয়; বরং এখানে التسليم المطلق (সাধারণ মেনে নেয়া)।’ -তাহকীমুল্ কাওয়ানীন: ১

মাসআলাটি সুস্পষ্ট, পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দ্বারা সাব্যস্ত। এটি মতবিরোধপূর্ণ কোনো মাসআলা নয় যে, উলামায়ে-সু এর সূত্র ধরে মানুষের মাঝে দ্বীনকে নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলবে। সুতরাং এসব তাগুতদেরকে বাতিল সাব্যস্ত করা, তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান করা অনেক বড় সাওয়াবের কাজ, ফিতনা নয়। বরং ফিতনা হলো, মুসলমানদের মাঝে আল্লাহর শরীয়তের বিবর্তনকারী তাগুতদের ব্যাপারে নীরব থাকা। অতএব, বর্তমান উলামা ও দাঈগণের উপর কর্তব্য হলো, এ মাসআলা প্রকাশ করা এবং তার দাওয়াত দেয়া। নিশ্চয় তাগুত ও তাদের সহযোগীরা মাসআলাটি মুছে দেয়া ও মানুষদেরকে এ থেকে বিরত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা ভালো করেই জানে যে, শরীয়তের নেতৃত্ব তাদেরকে ধ্বংস ও গুমরাহী সাব্যস্ত করার চূড়ান্ত মাধ্যম।

ড. সামী আল-উরায়দী

৮ সফর ১৪৩৮

************

مع تحيّات إخوانكمفي مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!আন নাসর মিডিয়াআল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখাIn your dua remember your brothers ofAn Nasr Media

Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

Report Page