- JustPaste.it

- JustPaste.it

Source

সৎকাজের সামনে মাথা নত করা তখা আনুগত্য করা.. 65

মুতাশাবিহ (যে সকল বাক্যের অর্থ জটিল এবং কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে সেগুলোকে মুতাশাবিহ বলা হয়) এমন মুতাশাবিহকে মুহকাম (যে সকল বিষয় অকাট্য ও দৃঢ় তাকে মুহ্কাম বলা হয়) এর দিকে ফিরিয়ে দেয়া এবং শরীয়ত-সম্মত ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রতি মনোনিবেশ করা   67

বর্তমানে মুসলমানরা যে সমস্যার সম্মুখীন, শরঈ শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তার চেয়ে আরো মারাত্মক সমস্যা    69

    শাইখের মুখতাসার পরিচিতি


শাইখ সামী আল উরাইদি ছিলেন জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের বিলুপ্ত শাম শাখা ‘জাবহাতুন নুসরাহ’র প্রধান শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ, মুফতি এবং বর্তমান শাখা তানযিম হুররাস-আদ-দ্বীনেরও প্রধান মুফতি। ১৯৭৩ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণকারী এই আলেম জামেয়া জর্ডান থেকে হাদিসের উপর পড়াশোনা করেন এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে হাদিসের উপর পিএইচডি করেন। তিনি প্রখ্যাত সিরিয়ান জিহাদি সমরকৌশলবিদ শাইখ আবু মুসআব আস-সুরী দ্বারা খুবই অনুপ্রাণিত ছিলেন। আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রখ্যাত জিহাদি সমরকৌশলবিদদের সাথে থেকে তিনি জিহাদ করেছিলেন, অতঃপর আল কায়েদার হয়ে ইরাকে লড়াই করেন এবং জাবহাতুন নুসরাহর প্রধান ছয় প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে আন নুসরাহ ফ্রন্টের ২য় প্রধান নেতা ছিলেন। সিরিয়াতে আন নুসরাহ ফ্রন্টের শক্ত অবস্থানের পেছনে আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি জিহাদ ও মুজাহিদদের নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি লিখেছেন। আধুনিক জিহাদের কর্মকৌশল নিয়ে তাঁর কিতাব ও ভিডিও মজলিসগুলো বিশ্বব্যাপী মুজাহিদদের মাঝে প্রভাব ফেলেছিল।

  শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহর ভূমিকা

بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه

আমি শাইখ সামী আল-উরাইদী হাফিজাহুল্লাহ প্রণীত نصائح للمجاهد في زمن الفتن রিসালা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আল্লাহর তাওফিকে আমি একে ফিতনা-ফাসাদের জমানায় মুজাহিদ ভাইদের জন্য স্বল্প পরিসরে একটি উপকারী পাথেয় গ্রন্থ হিসেবে পেয়েছি।

ফিতনার জমানায় মুজাহিদদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার সঠিক পথকে উপলব্ধি করা। কারণ হাতিয়ার ধারণ করা, কিতাল করা, ন্যায় সঙ্গতভাবে তা দিয়ে রক্ত ঝরানো, সঠিকভাবে মাল উসুল করে যথাস্থানে স্থাপন করা- এসব তার দায়িত্ব। প্রয়োজনে সে শত্রুকে বন্দি করবে, কখনো ধ্বংস করবে, কখনো নিশ্চিহ্ন করে দিবে।

এই সবকটি কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, যার পরিণাম অনেক কঠিন। এসব ক্ষেত্রে যদি শরীয়তের বিধান মেনে না চলে তাহলে উল্টো নিজে ধ্বংস হবে, জমিনেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বসবে।

একজন মুজাহিদ শুধু মুজাহিদ হওয়ার কারণে অন্যায়-অপরাধ, গুনাহ ও বিদআত থেকে নিষ্পাপ নয়। অতীত ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, খারেজী সম্প্রদায় কীভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল, কীভাবে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের উপর তরবারি চালাল! রাফেজী সম্প্রদায় কেমন করে রাসূলের সাহাবীদেরকে অস্বীকার করে বসল! আমরা আরো দেখতে পাই, জালিম শাসকগণ কীভাবে ইসলামের বিধি-বিধানকে বাতিল সাব্যস্ত করল, শত শত ব্যক্তিকে হত্যা করল। এমন কি তারা কা’বাকে পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিল!

বর্তমান সময়ে আফগান জিহাদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, আফগানিস্তান থেকে রুশবাহিনী চলে যাওয়ার পর তা কীভাবে ক্ষমতা, লুণ্ঠন ও ছিনতাইয়ের লড়াইয়ে পরিণত হল। এমনকি খোদ মুজাহিদদের মাঝেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। পরিশেষে আল্লাহ তা’আলা তালেবান আন্দোলনকে নির্বাচন করে আফগানিস্তানে ইসলামীক ইমারাহ প্রতিষ্ঠা করলেন। এভাবে মুসলমানরা ‘আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার’, শরীয়তের হুকুম বাস্তবায়ন এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের মাধ্যমে জিহাদের উৎকৃষ্ট ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়; যে বিষয়গুলো ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের হাতে প্রায় বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

উত্তর আফ্রিকায় আমরা দেখতে পাই, সেখানে বিজয়ের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছার পরও নির্বোধ ও চরমপন্থীদের অবাধ্যতার ফলে জিহাদি কাজ কীভাবে দমে গেল। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে জিহাদের মিশনকে সঠিক পথে পরিচালনাকারী মুজাহিদদের ইস্তেকামাত এবং সৎকর্মশীলদের দৃঢ়তা না থাকলে জিহাদ একেবারে নিঃশেষ হয়ে যেত।

বসনিয়ায় দেখেছি, মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ থেকে কীভাবে মুজাহিদরা ভিড় করে ছিল। কিন্তু অবশেষে তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের ছাড়ের ফলে অন্যায় ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ল।

ফিলিস্তিনে দেখেছি, রাজনীতিবিদরা মুসলিম যুবকদের কুরবানিকে ফিলিস্তিন বিক্রেতাদের বৈধতার স্বীকৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের ধাঁধাঁয় ফেলে কীভাবে নষ্ট করে দিল।

আবু মুসআব ও আবু হামযা রাহিমাহুল্লাহ এ দুই শাইখের শাহাদাতের পর ইরাকে দেখেছি, ক্ষমতাশীলদের এক দল কীভাবে মুজাহিদ ভাইদের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিলো। যার ফলে তারা তাকফির, কতল, ধোঁকা ও মিথ্যা বলাকে বৈধ মনে করতে লাগল।

মোটকথা হলো, একজন মুজাহিদ শুধুমাত্র মুজাহিদ হওয়ার কারণে ফিতনা থেকে নিরাপদ নয়, গুনাহ থেকে নিষ্পাপ নয়। এ জন্য তার উপর আবশ্যিক করণীয় দায়িত্ব হচ্ছে, ফিতনা ও গুনাহ থেকে সর্বাত্মক বেঁচে থাকা। সংক্ষিপ্ত রিসালাটি আশা করি এ ব্যাপারে মুজাহিদদের জন্য সহায়ক হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন লেখককে এবং এ রিসালার মাধ্যমে উপকার প্রদানকারী, উপকার গ্রহণকারী সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين ، وصلى الله على سيدنا محمد و آله وصحبه وسلم

                                                               - আইমান আয-যাওয়াহিরী

ভূমিকা

المحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على عبده و رسوله محمد و على الأنبياء و الرسل اجمعين، رب اشرح لي صدري و يسر لي أمري واحلل عقدة من لساني يفقهوا قولي ، وبعد :

আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করে তার থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ ফিতনা এমন এক জিনিস, বান্দার জন্য আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে যার খারাপ প্রভাব রয়েছে। বান্দাকে সরল পথ থেকে সরিয়ে ফেলে অথবা তাকে বর্তমান সময়ের দাবি অনুযায়ী বৃহৎ উদ্দেশ্যের পরিবর্তে অন্য কাজে ব্যস্ত করে তোলে। বৃহৎ উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর হুকুম বাস্তবায়ন।

সুতরাং আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের মধ্য হতে যাকে নির্বাচন করেন, বৃহৎ উদ্দেশ্যটি উপলব্ধি করার ক্ষমতা যাকে দান করেন, যার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে তা বাস্তবায়ন করার কাজ নেন সে এ বৃহৎ উদ্দেশ্য ও চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে ছোটখাটো কোনো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের কারণে সরে আসতে পারে না, যা তাকে বৃহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কাজে সহায়ক হতে সক্ষম নয়। যদিও ছোটখাটো বিষয়গুলো মূলগতভাবে মুবাহের পর্যায়ভুক্ত। সময় সীমিত, দায়িত্ব অনেক বড়। অবশ্যই এটি আল্লাহর দীনের জন্য নুসরত। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন,

قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴿﴾ وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَّا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ﴿﴾ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ ﴿﴾

‘কসম যুগের! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরে সদুপদেশ দেয় সত্যের, উপদেশ দেয় সবরের।’ (সূরা আসর ১০৩׃ ১-৩)

ইমাম মুসলিম রহ. থেকে বর্ণিত, আব্দুর রহমান ইবনে আবদে রব্বে কা’ব রহ. বলেন, ‘আমি মসজিদে হারামে প্রবেশ করলাম, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. কা’বার ছায়ায় বসা ছিলেন। আর লোকেরা তাঁর কাছে জমায়েত হল। আমিও তাদের সাথে বসে গেলাম। তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমরা এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। পথে আমরা এক জায়গায় অবস্থান করি। সেখানে আমাদের কেউ তাঁবু ঠিক করছিল, কেউ তীর প্রতিযোগিতা করছিল, কেউ তাদের গোত্রের সাথে অবস্থান করছিল। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষক ঘোষণা দিতে লাগল, নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে হাজির হলাম। তিনি বললেন, ‘আমার পূর্বে প্রত্যেক নবীর উপর দায়িত্ব ছিল তিনি যা ভালো কিছু জানতেন তা উম্মতের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া এবং মন্দ বিষয়ের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা। আর এ জাতির প্রথম অংশকে ফিতনা মুক্ত রাখা হয়েছে। এ জাতির শেষ ভাগে এমন মসিবত এবং মন্দ বিষয় আত্মপ্রকাশ করবে যা তোমরা অপছন্দ করে থাক, এমন ফিতনা আসবে যা পরস্পরে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। যখন ফিতনার আগমন ঘটবে তখন মুমিন বলবে, এ ফিতনা আমার ধ্বংসের কারণ। অতঃপর ফিতনা থেকে মুক্তি লাভ করবে। আরেক ফিতনা আসবে তখনও মুমিন এই সেই বলতে থাকবে। সুতরাং যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে চায়, জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়- তার কাছে যেন আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান থাকা অবস্থায় মৃত্যু এসে যায়। এবং সে যেন এমন লোকের কাছে চলে আসে যার কাছে আসা পছন্দনীয়। যে ব্যক্তি কোনো ইমামের হাতে বাইআত গ্রহণ করল, অতঃপর তাকে তার হাত ও অন্তরের খোরাকী দান করল- সে যেন যতটুকু সম্ভব তার অনুসরণ করে। যদি অন্য কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করতে আসে তাহলে তোমরা ভিন্ন লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেবে।’

যয়নাব বিনতে জাহাশ রা. এর সূত্রে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

أَنَّ زَيْنَبَ بِنْتَ جَحْشٍ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَزِعًا مُحْمَرًّا وَجْهُهُ يَقُولُ ‏"‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ ‏"‏ ‏.‏ وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ الإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيهَا ‏.‏ قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ ‏"‏ نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ ‏"‏ ‏.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী যাইনাব বিনতু জাহ্শ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হলেন। তখন তাঁর বারাকাতময় চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করলো। তিনি বলছিলেন, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। আরব বিশ্বের আগত অকল্যাণের দরুন বড়ই পরিতাপ যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে। আজ ইয়া’জূজ মা’জূজ এর প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এ সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত আঙ্গুলির দ্বারা বেড় বানালেন।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মাঝে অনেক সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার অধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে। (ই.ফা. ৬৯৭৩, ই.সে. ৭০৩১)

উসামা ইবনে যায়েদ রা. এর সূত্রে বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْد ٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ أَشْرَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ ‏"‏ هَلْ تَرَوْنَ مَا أَرَى ‏"‏‏.‏ قَالُوا لاَ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَإِنِّي لأَرَى الْفِتَنَ تَقَعُ خِلاَلَ بُيُوتِكُمْ كَوَقْعِ الْقَطْرِ ‏"‏‏.‏

উসামা ইবনে যায়েদ রা. বলেন, ‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার টিলাসমুহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সাহাবা-ই-কিরাম বললেন, না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টিধারার মতো নিপতিত হচ্ছে। (বুখারী-৬৫৮২)

বিষয়টি যখন এমনই, তাই আমি বর্তমান সময়ে খোদা প্রদত্ত শরীয়ত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট বন্ধু-বান্ধবদের সামনে উল্লিখিত আলোচ্য বিষয়ে এ নসিহতটি উপস্থাপন করলাম।

ফিতনার পরিচয়:

ইমাম যুহরী রহ. ‘তাহযীবুল লুগাত’ এ বলেন, আরবদের ভাষায় ‘আল-ফিতনা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, বিপদে পতিত হওয়া, পরীক্ষা করা ইত্যাদি। এ শব্দটি মূলত গৃহীত হয়েছে فتنت الفضة و الذهب (আমি স্বর্ণ-রূপা পরীক্ষা করেছি) থেকে। এটি তখনই বলা হয় যখন স্বর্ণ-রূপাকে আগুন দ্বারা বিগলিত করা হয়, যেন ভাল থেকে মন্দটি আলাদা হয়ে যায়।’

ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, ‘الفتنة  শব্দের অর্থ হচ্ছে, পরীক্ষা, পরিশ্রম, মাল, সন্তানাদি, কুফরি, মতপার্থক্য, আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি। কারো কারো মতে الفتنة শব্দের অর্থ অবিচার করা। বলা হয়ে থাকে, فلان مفتون في طلب الدنيا অর্থাৎ- অমুক দুনিয়া তালাশের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করেছে।’- লিসানুল আরব

এ ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, শরীয়তের ভাষায় ফিতনা একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা তার পূর্বাপরের দ্বারা বুঝে আসবে। ইবনুল কায়্যিম রহ.‘যাদুল মা’আদ’ (৩/১৫০)-এ বলেন, ‘যে فتنة শব্দটি আল্লাহ তা’আলা নিজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে বলেছেন, যেমন আল্লাহর বাণী, وكذلك فتنا بعضهم ببعض মূসা আ. এর বক্তব্য, إن هي إلا فتنتك تضل بها من تشاء وتهدي من تشاء এক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ হবে ভিন্ন। তা হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাকে ভাল-মন্দের নিয়ামত ও বিপদ-আপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করা। সুতরাং মুশরিকদের পরীক্ষার মধ্যে এক ধরণের রং বিদ্যমান, আর মুমিনের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও পরিজনের ক্ষেত্রে পরীক্ষার রং আলাদা। যে ফিতনা মুসলমানদের মাঝে দেখা যায় তা মূলত আলী ও মুআবিয়া রা. এর সঙ্গীদের মাঝে, জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফ্ফীনের মুজাহিদদের মাঝে এবং মুসলমানদের মাঝে সংঘটিত ফিতনার পর্যায়ভুক্ত। তাদের পরস্পরের জিহাদ ও একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার রং ভিন্ন রকম। এটি এমন ফিতনা, যে ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِى وَالْمَاشِى فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِى

‘সেখানে(ফেতনার সময়) দণ্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে বসে থাকা ব্যক্তি উত্তম, হেঁটে চলা ব্যক্তির চেয়ে দণ্ডায়মান ব্যক্তি উত্তম, ধাবমানকারী ব্যক্তির চেয়ে হেঁটে চলা ব্যক্তি উত্তম।’(মুসলিম-৭৪২৯)

যে সব ফিতনার হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’দলকেই পরিত্যাগ করতে বলেছেন এসব সে প্রকারের ফিতনা।

কখনো কখনো ‘ফিতনা’ দ্বারা ‘গোনাহ’ উদ্দেশ্য হয়। আল্লাহ তা’আলার বাণী, ومنهم من يقول اءذن لي ولاتفتني  এ কথাটি জাদ্দ ইবনু কায়েসের। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাবুক যুদ্ধের জন্য আহ্বান করছিলেন তখন সে বলেছিল, আমাকে ঘরে থাকার অনুমতি দেন, আমাকে বনুল আসফারের মেয়েদের সম্মুখীন করে ফিতনায় ফেলবেন না। কারণ আমি তাদের থেকে ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, ألا في الفتنة سقطوا ‘তারা ফিতনার শিকার হয়ে গেছে’। অর্থাৎ তারা নেফাকের ফিতনায় জড়িয়ে পড়েছে। বনুল আসফারের মেয়েদের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য নেফাকের ফিতনাকে বেছে নিয়েছে।

হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, ‘ফিতনা শব্দের মূল অর্থ- পরীক্ষা করা, যাচাই করা। শরীয়তের পরিভাষায় অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশপূর্বক পরীক্ষা করার নাম ফিতনা। যখন ভালটি পরখ করার জন্য স্বর্ণকে আগুন দ্বারা যাচাই করা হয় তখন বলা হয় فتنت الذهب । উদ্দিষ্ট বিষয়ে গাফলতি পাওয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন আল্লাহর বাণী, إنما أموالكم وأولادكم فتنة ‘নিশ্চয় ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য ফিতনা স্বরূপ।’ দ্বীন থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাধ্য করার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর বাণী

إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ (10)

যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তওবা করেনি, তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা, (সূরা আল-বুরুজ ৮৫׃ ১০)

আমি বলি, ফিতনা শব্দটি পথভ্রষ্ট, অন্যায়, কুফর, শাস্তি ও অপমানের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। পূর্বাপরের সম্পর্ক ও লক্ষণ অনুযায়ী উদ্দিষ্ট অর্থ বুঝা যাবে।’

বি.দ্র.- যে ফিতনা মতৈক্য ও ঝগড়া-বিবাদের সময় দেখা দেয়- সেটি এমন ফিতনা যার কারণে হকের সাথে বাতিলের তালগোল পেকে যায়, তাতে হক বিষয়টি প্রকাশিত হতে পারে না; বরং অধিকাংশ মুসলমানের কাছে অস্পষ্ট থেকে যায়। হুযাইফা রা. বলেন,

"لا تضرك الفتنة ما عرفت دينك،

إنما الفتنة إذا اشتبه عليك الحق والباطل

فلم تدر أيهما تتبع؟

فتلك الفتنة".

[مصنف ابن أبي شيبة:٧٠/١٥]

‘সঠিক দ্বীন তোমার সামনে স্পষ্ট হওয়ার পরও যেন ফিতনা তোমাকে ক্ষতি করতে না পারে। ফিতনার কারণে যখন তোমার কাছে হক-বাতিল অস্পষ্ট হয়ে যাবে এবং বুঝতে পারছ না তুমি কোনটার অনুসরণ করবে- তাহলে ধরে নিবে এটিই ফিতনা।’ –( মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-১৫/৭০)

সালাফে সালিহীনের বুঝ অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে হবে

খাইরুল কুরুন এবং উত্তমরূপে তাদের অনুসরণকারীদের দিকনির্দেশনায় কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা ফিতনার জমানায় মুজাহিদদের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জনের বিষয়। সব সময়ের জন্য এই মজবুত রজ্জুকে আঁকড়ে ধরাই মুক্তির পথ। যে ব্যক্তি আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করতে পারল সেই হিদায়েত প্রাপ্ত এবং কামিয়াব। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ﴿﴾

‘আর যারা সর্ব প্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তা’আলা সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা।’ (সূরা আত –তাওবা ৯׃ ১০০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

"‏ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ

অর্থ: বানী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বানী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।(তিরমিজী-২৬৪১)

ইরবায ইবনে সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا قَالَ: «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عبدا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ من يَعش مِنْكُم يرى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ

অর্থ: ইরবায ইবনে সারিয়া রা. বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন, এরপর আমাদের সামনে এসে একটি চমৎকার নসিহত পেশ করলেন, যার দ্বারা অশ্রু সিক্ত হয় ও হৃদয় বিগলিত হয়। একজন বলছিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মনে হচ্ছে এটি বিদায়ী ভাষণ। অতএব, আপনি আমাদের কী উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে খোদাভীতি ও আনুগত্যের উপদেশ দিয়ে যাচ্ছি, যদিও তা একজন হাবশি গোলামের প্রতি হয়ে থাকে। আমার পরে যে বেঁচে থাকবে সে অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নত এবং খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নতকে মেনে চলবে এবং মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে। আর আবিষ্কৃত নতুন নতুন বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে; কারণ, দ্বীনের মাঝে প্রত্যেক নতুন আবিষ্কার বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআতই গুমরাহী।’ - আবু দাউদ

নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা

ফিতনার জমানায় যে বিষয়টি বান্দাকে সবচেয়ে বেশি হেফাজত করবে তা হচ্ছে, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ এবং তাঁর আনুগত্য, ইবাদত ও নেক আমলের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। সুতরাং নেক বান্দা যখন কোনো বিষয়ে সন্দেহে পতিত হবে তখন দোয়া, ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার দিকে মনোনিবেশ করবে। ফিতনার জমানায় আনুগত্য ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, হিদায়েত ও অবিচলতার সবচেয়ে বড় সহায়ক। এর দ্বারা বিপদ-আপদ দূর হয়, হিদায়েত নাযিল হয় এবং বান্দা অবিচলতার রিজিকে ধন্য হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّـهِ ۚ ذَٰلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا ﴿﴾

‘অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এর দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। () – (সূরা তালাক 65: ২-3)

وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّـهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّـهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿﴾ وَإِذًا لَّآتَيْنَاهُم مِّن لَّدُنَّا أَجْرًا عَظِيمًا ﴿) আর তখন অবশ্যই আমি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে মহান সওয়াব দেব। (নামাজ

নামাজ বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যকার বিশেষ একটি বন্ধন, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে, যার মাঝে প্রশান্তি খোঁজে পায়। নামাজ বান্দার জন্য চোখের শীতলতা, উচ্চ মর্যাদা ও চির সফলতা লাভের কারণ, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুসংহত পদ্ধতি। আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿দোয়া ও যিকির

দোয়া ও যিকির মুমিন বান্দার সবসময়ের অস্ত্র; বিশেষকরে ফিতনার জমানায়। সুতরাং ফিতনার সময়কালে মুসলমান বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার ও যিকিরে মশগুল থাকবে; কারণ ফিতনার জমানায় কেউ দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে না, কেবল আল্লাহ যাকে অটল রাখেন, যাকে ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন- সে ছাড়া। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ﴿﴾

‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শুকরিয়া আদায় কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ – (সূরা বাকারা ২: ১৫২)

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّـهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّـهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ ﴿﴾



Read Next page

Report Page