মারণ রোগ

মারণ রোগ

sovo

পুজোর ভিড়ের খেসারত, একদিকে হু হু করে উর্ধ্বমুখী করোনা' র গ্রাফ, অন্য দিকে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু- ম্যালেরিয়া!রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে নতুন করে করোনা থাবা ফেলেছে প্রায়  জনের ওপর, তার মধ্যে সংক্রমনের হার কলকাতায় সর্বাধিক, সাথে দোসর হয়েছে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মতো মারণ রোগ আর তাতেই জেরবার মহানগরী!  পৌরসভার জরুরি বৈঠকের আলোচনায় কিছু বিষয় উঠে এসেছে তাতে দেখা গেছে ই এম বাইপাস সংলগ্ন জায়গাগুলিতে এর প্রকোপ সব থেকে বেশি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাস পর্যন্ত এই রাজ্যে ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২২৪ জন এর বেশি মানুষ. অগাষ্ট পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ! ইতিমধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, ডেঙ্গির প্রকোপে পড়েছেন ৩৭ জন মানুষ, কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ, ডেঙ্গি তে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০০ পার!

অতিমারির জন্য বছর দেড়েক আড়ালে ছিল মশা ও জলবাহিত রোগ। ফের কোভিড যখন শিয়রে তখন ফের তারা স্বমহিমায়। বর্ষাকালই কি শুধু দায়ী, নাকি রয়েছে অন্য কারণও? গত দেড় বছর ধরে করোনা নিয়ে ব্যস্ত প্রশাসন! একদিকে শীতের আগমনী বার্তা বাতাসে, অন্য দিকে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। এর সঙ্গেই করোনার দাপট এর মধ্যেই এবার ডেঙ্গু ম্যালেরিয়াকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে বাংলা জুড়ে।উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বারাসত, বাদুড়িয়া, মধ্যমগ্রাম, বেলঘরিয়ার পাশাপাশি ট্যাংরা, তিলজলাতেও থাবা বসাচ্ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ। এর সঙ্গেই মালদহ, হুগলি, মধ্য হাওড়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা থেকে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। আর এতেই ঘুম ছুটেছে স্বাস্থ্য দফতরের। বিশেষজ্ঞদের দাবি প্রায় চার বছর পর ফের রাজ্যে থাবা বসাচ্ছে মশাবাহিত রোগ। তবে এবার কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। এতদিন মশা নিয়ন্ত্রণে কোনও বিশেষ পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি, অনেকে বলছেন উদাসীনতা৷ অনেকের মতে, কোভিড নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন পুরো শক্তি ব্যবহার করায় এ দিকটা ফাঁকি পড়ে গিয়েছে৷ যদিও পুর প্রশাসন এই অভিযোগ মানছে না৷ দমদমের মু্খ্য পুর প্রশাসক বরুণ নট্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোভিডের পাশাপাশি আমরা নজর দিয়েছি জল ও মশাবাহিত রোগের দিকেও৷ অবহেলা করা হয়েছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়৷ তাই আমাদের পুর এলাকায় একটি কেসও ধরা পড়েনি৷” তেমন কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশে্ষজ্ঞদের বক্তব্য, গত বছর লকডাউন বিধি মেনে চলার জন্য এই সংক্রমক রোগগুলি বাড়তে পারেনি৷ রাজ্যের ডেঙ্গু টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডা. জ্যোতির্ময় পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মানুষের কার্যকলাপ যত বাড়বে, জমা জল বাড়বে, ফলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হবে৷"প্রসঙ্গত, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় দিন পনেরো আগে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তলব করা হয়েছিল কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা কেন বাড়ছে এবং তা কমাতে পুরসভা কী করছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। মশাবাহিত রোগের প্রতিকারে পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু তার পরেও কমেনি ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির প্রকোপ।



কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলছেন, ‘‘ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শহরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই চারটি বরোর বাসিন্দা। আমরা ওই সমস্ত বরো নিয়ে পর্যালোচনা করছি। আগেও এই সমস্ত বরোর বাসিন্দারা আক্রান্ত হয়েছেন।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ওই সমস্ত এলাকার লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী মানুষ ম্যালেরিয়ার ওষুধের কোর্স শেষ না করায় তাঁদের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু রয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁদের চিহ্নিত করে রক্তের নমুনা সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিষেধক প্রদানের কাজও করতে হচ্ছে বলে পুরকর্মীদের উপরেও চাপ রয়েছে। তবে তাঁর আশ্বাস, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপই করা হবে।

এইদিন ই এম বাইপাস সংলগ্ন জায়গাগুলিতে বিতরণের জন্য ২০ হাজার মশারি তুলে দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের হাতে!



Report Page