Demo

Demo

Sabya
Toggle navigationগবেষণায় আনন্দই সেরা পুরস্কার, নোবেল নয়পথিক গুহকলকাতা|২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৭:১৬:২৯শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১৩:৪১:২৯ 

বক্তা: প্রেসিডেন্সির অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী বেঙ্কটরামন রামকৃষ্ণন। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বিজ্ঞানে তাক-লাগানো আবিষ্কারের রেসিপি কী?

পুরস্কার, স্বীকৃতি ইত্যাদির কথা না ভেবে নিজের ভাল লাগার বিষয়ে ডুবে যাওয়া। এমনটাই মনে করেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী এবং ব্রিটেনে রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট বেঙ্কটরামন রামকৃষ্ণন। 

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে কেমব্রিজে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল ল্যাবরেটরি অব মলিকিউলার বায়োলজির এই গবেষক জানালেন, পুরস্কার এবং স্বীকৃতির চিন্তা কী ভাবে গবেষণার ক্ষতি করে। 

তিনি ব্যাখ্যা করলেন, নোবেলের মতো পুরস্কার অনেক সময়েই গবেষণার শ্রীবৃদ্ধি না ঘটিয়ে ক্ষতিই করে। নোবেল পুরস্কার তো দেওয়া হয় মাত্র তিন জন বিজ্ঞানীকে। বিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে পুরস্কারগুলি দেওয়া হচ্ছে যুগান্তকারী আবিষ্কারের পরিবর্তে অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী এবং সুযোগসন্ধানী গবেষণাকে। এ রকম গবেষক প্রায়শই থাকেন তিনের বেশি। সুতরাং, যে তিন জন পুরস্কৃত হলেন, তাঁরাই যে সেরা, সেটা বুঝব কী করে? 

রামকৃষ্ণনের মতে, প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়— ও সব খেলাধুলোয় সম্ভব। ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় সরাসরি দেখা যায় কারা প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হলেন। বিজ্ঞান গবেষণায় এটা বলা শুধু ভুলই নয়, অন্যায়ও। 

নিজে নোবেল বিজয়ী হয়েও পুরস্কার, স্বীকৃতি বা এই গ্রহের সেরা শিরোপা নোবেল নিয়ে এমন মতামত এই বিজ্ঞানীকে চিনিয়ে দেয়। ঠাট্টা করে তিনি বললেন, ‘‘আমি ব্যাপারটাকে ‘প্রি-নোবেলাইট’ এবং ‘পোস্ট-নোবেলাইট’ এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছি। এক দল বিজ্ঞানী আছেন, যারা উঁচু মানের কাজ করেই ভাবতে বসেন, এই বুঝি নোবেলটা জুটে গেল। অথবা পাবেন কি না, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। অক্টোবর মাস এলেই তারা দুরুদুরু বুকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন, পাব কি পাব না। অথবা, এই রে, অন্য কেউ বুঝি পেয়ে গেল! আমি জানি, এ রকম গবেষক এই ভারতবর্ষেও আছেন।’’

আর ‘পোস্ট-নোবেলাইট’ কারা? রামকৃষ্ণনের উত্তর, ‘‘সেই তাঁরা, যাঁরা পুরস্কারটা পাওয়ার পরেই বিশ্বব্যাপী লেকচার টুরে বেরোন। জ্ঞান বিলোন বিশ্বের সমস্ত বিষয়েই, নিজেদের মনে করেন সর্বজ্ঞ। আর মানুষেরও বলিহারি যাই, নোবেলবিজয়ী দেখলেই দুরূহ প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে বসে যান। প্রশ্নকর্তারা জানেনই না যে, নোবেলজয়ীরা অত্যন্ত ‘ফোকাস্‌ড’, ফলে তাঁদের নিজেদের বিষয়টি ছাড়া আর কিস্যু জানেন না।’’

বিজ্ঞানীমানস সম্পর্কে নানা রকম মিথ-ও তাঁর বক্তৃতায় ভেঙে দেন রামকৃষ্ণন। বলেন, ‘‘গবেষক অন্য গ্রহের জীব নন। তাঁরাও মানুষ। ফলে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা, হিংসা, দ্বেষ এ সব গবেষণার জগতে খুবই স্বাভাবিক।’’ পাছে তাঁর কথায় তরুণ গবেষকেরা ভুল বোঝেন, তাই নিজেকে শুধরে রামকৃষ্ণন বলেন, ‘‘আমার কথা শুনে তোমাদের মনে হতে পারে গবেষণায় কেন যে এলাম! আমি যা বললাম তার উল্টো ছবিও আছে। সবাই সমান নয়। এই ধরো আমার কথা। আমার গবেষণায় সাহায্য করেছেন অনেকেই। ওঁদের সাহায্য ছাড়া আমি এগোতে পারতাম না।’’
রামকৃষ্ণন ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস স্টেইৎজ় এবং ইজ়রায়েলের রিহোভোত শহরে ওয়াইজ়ম্যান ইনস্টিটিউটের আডা ইয়োনাথ-এর সঙ্গে। যে গবেষণার জন্য ওই পুরস্কার তা হল, কোষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মেশিন রাইবোজ়োমের গঠন এবং ক্রিয়া আবিষ্কার। প্রাণীদেহে প্রত্যেকটা কোষেই থাকে রাইবোজ়োম। প্রাণের যা মূল কাজ, সেই ডিএনএ-র নির্দেশ মেনে প্রোটিন অণু তৈরি, তা সম্ভব হয় শুধু রাইবোজ়োমের দাক্ষিণ্যে। সে অর্থে প্রাণীদেহ, তার অসুখবিসুখ এবং সে সবের ওষুধ প্রস্তুতে এই রাইবোজ়োমের গুরুত্ব অপরিসীম। কোষে এই সাংঘাতিক উপাদানটির ক্রিয়াকৌশল না বুঝলে জীবন নামে বস্তুটি থেকে যায় অচেনা। রাইবোজ়োমের গঠন আবিষ্কার এ কারণে এক মহামূল্যবান সাফল্য। মজার ব্যাপার রামকৃষ্ণন যে কাজ করলেন, তা জীববিজ্ঞানের, অথচ নোবেল পেলেন রসায়নে। 
সব চেয়ে আশ্চর্য বোধহয় এই যে, ছাত্র হিসেবে স্নাতক পর্বে কিন্তু তিনি পড়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞান। এবং এই ভারতেই। তার পর চলে যান আমেরিকায়। নিজের জীবনকাহিনি শুনিয়ে রামকৃষ্ণন বললেন, ‘‘আমি দ্রুত বুঝতে পারলাম পদার্থবিজ্ঞান বড় কঠিন। নাহ্ পরীক্ষার প্রশ্নে নয়, গবেষণায়। সবাই তো আর আলবার্ট আইনস্টাইন বা পল ডিরাক হন না। আমি যখন ছাত্র, তখন দেখলাম পদার্থবিদ্যার গবেষণা এক জায়গায় এসে আটকে গিয়েছে। নতুন আবিষ্কার আর হচ্ছে না। এই সময়ে ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’ পত্রিকায় দু’টো লেখা পড়ে ঠিক করে ফেললাম গবেষণার বিষয় বদলাতে হবে। আমার আগে  অনেক পদার্থবিদই জীবরসায়নের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন। ম্যাক্স ডেলব্রুক, ফ্রান্সিস ক্রিক, ডন কেনড্রু ইত্যাদি। আমিও ভাবলাম ওঁদের পথেই যাব। সেই ভেবে নতুন করে জীববিজ্ঞান শেখা এবং শেষে আমেরিকা ছেড়ে পাড়ি ইংল্যান্ডে। আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও। এক সময়ে রাইবোজ়োমের গঠন আবিষ্কার ঘিরে চারটে দল প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। আমিও তার মধ্যে। সব সময় ভাবতাম, যদি আমাকে কেউ ‘স্কুপ’ করে দেয়? আমার স্ত্রী ঠাট্টা করে বলতেন, ‘তুমি কি সাংবাদিক? স্কুপড হওয়ার ভয় পাচ্ছ কেন?’ মনের আনন্দে গবেষণা করে যাও।’’       


TAGS :   Venkatraman Ramakrishnan   Nobel Prizeআরও খবরনোবেল-যোগ্য গবেষণা ঘিরে বিতর্কের ঝড়অত বিখ্যাত নন! আগে নোবেলজয়ীকে পাত্তাই দেয়নি উইকিপিডিয়াএ বার বিবর্তনেও মানুষের নিয়ন্ত্রণ! রসায়নের নোবেলে তারই ইঙ্গিতঅর্ধশতাব্দী পর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল মহিলার, সঙ্গী আরও দুইCommunity guidelines
সম্পাদকের পছন্দকোচবিহারে বিক্ষোভের মুখে সুব্রত বক্সী, ঢুকতে পারলেন না শীতলকুচিতেজেলের মধ্যে খুন শিখ ধর্মগ্রন্থ অবমাননায় মূল অভিযুক্ত, থমথমে গোটা পঞ্জাব, মোতায়েন আধা সামরিক বাহিনীদু’বছরেও তদন্ত শেষ হল না! সিবিআই দফতরে এসে আক্ষেপ ম্যাথুর, ফের তলব দিল্লিতে৫ দিনে জরিমানা ৫ হাজার বাইকের, তাণ্ডব রুখতে এ বার নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে অভিযানআপনার পছন্দএই ক্রিকেটারকে পরবর্তী ‘ধোনি’ বললেন ল্যাঙ্গার  মমতার সরকারের পুলিশই তাঁর প্যারোল আটকেছিল, ফেসবুকে বিস্ফোরক মদনAbout UsAdvertisePrivacyTerms of UseContact UsFeedbackSite MapWork for Us © 2019 ABP Pvt. Ltd.

Report Page