সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে মুরতাদ বাহিনীর নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হারাকাতুশ শাবাবের হামলার আসল চিত্র এবং হামলায় নিহত সাধারণ মানুষের জন্য শাবাব মুখপাত্রের শোকবার্তা প্রকাশ।

গত ২৮ ডিসেম্বর সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে মুরতাদ বাহিনীর একটি সামরিক নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হামলা চালায় হারাকাতুশ শাবাবের একজন ইস্তেশহাদি মুজাহিদ। হামলায় বহু সংখ্যক দালাল মুরতাদ সেনা, পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি অনাকাঙ্খিতভাবে চেকপয়েন্টে থাকা একটি গাড়ির বেশ কয়েকজন সাধারণ মুসলিম নাগরিকও নিহত হয়েছেন।

বরাবরের মতো আন্তর্জাতিক কুফফার চক্র এবং সোমালিয়ার দালাল প্রশাসন হামলায় হতাহত শুধুমাত্র সাধারণ নাগরিকদেরকে দেখিয়ে  হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, তারা নিরীহ সাধারণ মুসলিমদেরকে টার্গেট করেছে। অথচ দুনিয়ার তাবত কুফফার মিডিয়াও নিউজ করেছে যে, হামলাটি জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন মদদপুষ্ট মুরতাদ বাহিনীর সামরিক নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে এই হামলা চালানো হয়েছে।

হারাকাতুশ শাবাব এর পক্ষ থেকে গতকাল প্রদান করা এক অফিসিয়াল বার্তায় বলা হয়েছে,  ব্যাপক অনুসন্ধানের পর উক্ত হামলায় হতাহতের যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তা হচ্ছে, তুরষ্কের সামরিক কর্মকর্তা-৪ জন, তুরষ্ক বাহিনীর সহযোগী যোগানদাতা-৪, তুর্কি বাহিনীর দোভাষী-১, তুরষ্কের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তারক্ষী-১২, চেকপয়েন্টের দায়িতে নিয়োজিত পুলিশ-২১, দালাল সরকারের মিলিশিয়া-৬, সোমালি সরকারের গোয়েন্দা চর-৯, দালাল সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা-৪, সাধারণ মুসলিম-২৩ জন।

হামলায় সর্বমোট নিহতের সংখ্যা ৮৪ জন।

এছাড়া এই হামলায় ৬৯ জন আহত হয়েছে।     

অথচ হতাহতের এই সংখ্যাকে আড়াল করে শুধুমাত্র কিছু সাধারণ মুসলিমকে ছবি ও ভিডিওতে দেখিয়ে মুরতাদ বাহিনীর প্রোপাগান্ডা মিডিয়াগুলো এই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

হামলাটি কোথায় হয়েছে এবং কারা নিহত হয়েছে তা জানার জন্য চরম ইসলাম,জিহাদ ও মুজাহিদ বিদ্বেষী ও সোমালিয়ার দালাল মুরতাদ বাহিনীর সপক্ষে থাকা জার্মানির মিডিয়া ডয়চে ভেলে’র রিপোর্ট থেকে দু’টি লাইন তুলে দিচ্ছি।

শিরোনামের নিচের লেখা আছে,

“A car bomb exploded at a busy security checkpoint in Somalia's capital …. অর্থাৎ সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে একটি ব্যস্ত নিরাপত্তা চৌকিতে একটি গাড়ী বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে।

হামলায় হতাহতের ব্যাপারে রিপোর্টে আরো লিখেছে, the victims included university students, other civilians and security personnel. অর্থাৎ হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, অন্যান্য বেসামরিক নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে।

রিপোর্টের লিংক…. https://bit.ly/39vsDho  

 যেখানে ক্রুসেডার জার্মানির ডয়চে ভেলে এবং দুনিয়ার প্রায় সকল মিডিয়া এই সংবাদ প্রচার করেছে যে, হামলাটি নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হয়েছে এবং তাতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি অন্য সাধারণ মানুষও মারা গেছে।  অথচ কুফফার-মুরতাদ মিডিয়াগুলোই আবার এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে যে, হারাকাতুশ-শাবাব নাকি সাধারণ মুসলিমদেরকে টার্গেট করেছে !!! 

.

হামলার পর হামলায় হতাহতদের আসল চিত্র এবং সোমালিয়ায় জিহাদের বাস্তবতা বিস্তারিত তুলে ধরে হারাকাতুশ শাবাবের মুখপাত্র শাইখ আলি মাহমুদ রাজি হাফি. শাবাব নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে তাদের পরিচালিত স্থানীয় রেডিওকে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন,

“আমরা সোমালিয়ার মুসলিমরা মুসলিম উম্মাহর অংশ। আমাদের ভূমি দখল করা হয়েছে এবং আল্লাহর শরিয়ত দ্বারা শাসন করায় আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এধরণের পরিস্থিতিতে হানাদার শত্রুকে পরাজিত করতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর জিহাদ এবং ক্রুসেডার ও তাদের মুরতাদ সহযোগীদের বিরুদ্ধে কিতাল করাকে এমন সকল পন্থায় ফরজ করেছেন, আল্লাহর সুদৃঢ় শরিয়ত আমাদেরকে যেসব পন্থা বৈধ করেছে।  ”

শাবাব মুখপাত্র আরো বলেন, “ইসলামের শত্রুরা আজকে যে মাত্রায় মুসলিমদের ভূমিকে দখল করে রেখেছে, এভাবে দখল করার ঘটনা ইতিহাসে পাওয়া যায় না এবং আজকে শত্রুরা যেভাবে মুসলিমদের মাঝে মিশে আছে, অতীতে কখনো এভাবে মুসলিমদের সাথে মিশে থাকেনি।”

শাবাব মুখপাত্র শাইখ আলি রাজি আরো বলেন, “গত শনিবার ২ জামাদিউল উলা ১৪৪১/ ২৮ ডিসেম্বর তারিখে মোগাদিসুর আফগোয়ি এলাকার “এক্স কন্ট্রোল ইন্টারসেকশনে”  তুরষ্ক এবং মুরতাদ সরকারের বাহিনীর উপর মুজাহিদগণ এক হামলা চালান, যার মাধ্যমে সোমালিয়ায় মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তুরষ্ক বাহিনী ও তাদের নিরাপত্তাদানকারী মুরতাদ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এর পাশাপাশি হামলার সময় হামলাস্থলে উপস্থিত থাকায় সাধারণ মুসলিমদের মধ্যেও বেশ কিছু মানুষ হতাহতের শিকার হয়। আমরা এজন্য সর্বোচ্চ দুঃখ প্রকাশ করছি এবং হামলায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত   মুসলিমদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।  আল্লাহ তা’আলার কাছে কামনা করছি, তিনি যেনো নিহত মুসলিমদেরকে শহিদ হিসেবে কবুল করেন এবং তাদেরকে জান্নাতে স্থান দেন।  আমি আরো কামনা করছি, আল্লাহ যেনো তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্যধারণ ও শোক সইবার তাউফিক্ব দান করেন। অনুরুপভাবে আহতদের জন্য দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ সবার জন্য কল্যাণের কামনা করছি।”  

শাবাব মুখপাত্র আরো বলেন,

“মুসলিমদের এই হতাহতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমরা। অথচ এই হামলাকে কেন্দ্র করে ক্রুসেডার, মুরতাদ বাহিনী এবং তাদের মিডিয়াগুলো মুজাহিদদের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট প্রোপাগান্ডা চালিয়ে হারাকাতুশ শাবাবের ইমেইজ ক্ষুণ্ণ করতে চাচ্ছে। যদি তারা সত্যিকারেই মুসলিমদের কষ্ট নিয়ে চিন্তিত হতো, তাহলে তারা সোমালিয়ার মুসলিমদের উপর আমেরিকা, ইথিউপিয়া ও কেনিয়ার অব্যাহত বর্বরোচিত অপরাধের কথা আলোচনা করতো, যা তারা মুসলিমদের উপর চালিয়ে যাচ্ছে।

এই উম্মাহ,যাদের জন্য আমরা আমাদেরকে কুরবানি দেই, এই উম্মাহর সন্তানরাই মুজাহিদদের সন্তান, যারা দ্বীন,ভূমি এবং ইজ্জতের প্রতিরক্ষায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছে, আল্লাহ তাদেরকে শহিদ হিসেবে কবুল করুন। তুর্কি শত্রু বাহিনী এবং মুরতাদ বাহিনী তাদের গাড়ির আড়ালে মানব বর্ম হিসেবে এসব মুসলিমদের গাড়ি রেখে দেওয়ায় তারাও এই হামলার মধ্যে পড়ে যায়।”  

শাবাব মুখপাত্র শাইখ আলি রাজি আরো বলেন,

“আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুসলিমের রক্ত হচ্ছে পবিত্র। আল্লাহ তা’আলা তা আমাদের জন্য নিরাপদ ও হারাম করেছেন। আমরা আল্লাহর শরিয়তের অনুসরণ করি। তাদের ধারণা অনুযায়ী যদি মুজাহিদগণ মুসলিমদেরকে টার্গেট করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে “এক্স কন্ট্রোল ইন্টারসেকশন” এর মতো কঠিন জায়গায় না করে অন্য জায়গায়ই করতে পারতো। কিন্তু আমাদের টার্গেট মুসলিমরা ছিল না বরং দ্বীনের শত্রুরা ছিল।

আমাদেরকে এখন শত্রুর সাথে লড়াইয়ের চিত্র নিয়ে ভাবতে হবে এবং তাদের নিকৃষ্ট চক্রান্ত উপলব্ধি করতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, শত্রুরা মুসলিমদের মাঝেই বসবাস করে এবং তাদের সাথে মিশে থাকে। ফলে যখনই মুজাহিদগণ এই শত্রুকে হামলা করেন, তখন মুসলিমরাও ক্ষতির শিকার হয়। আমরা এখন দু’টি বিষয়ের সামনে। হয় আমরা মুসলিমদের ক্ষতি থেকে পুরোপুরি রক্ষার জন্য মুসলিমদের সাথে মিশে থাকা এই শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ বন্ধ করে দেবো, ফলে এই শত্রু আমাদের ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাকাপোক্তভাবে জেঁকে বসবে অথবা আমরা মুসলিমদের ক্ষতি এড়ানো এবং তা সর্বনিম্ন রাখার প্রচেষ্টার সাথে সাথে শত্রুর বিরুদ্ধে কিতাল অব্যাহত রাখবো। একনিষ্ঠ শরিয়ত এবং আকল এটিই জোরালোভাবে নিশ্চিত করে যে, এই শেষের পথটি-ই হচ্ছে সঠিক। আমরা এই পথেই কাজ করে যাচ্ছি, যা রক্তের ব্যাপারে সতর্কতাকে নিশ্চিত করে।”   

উল্লেখ্য তুরষ্কের সেনাবাহিনী ও সরকার সোমালিয়ার মুরতাদ দালাল সরকারের সেনাবাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এলক্ষ্যে তুরষ্কের সেনাবাহিনী সোমালিয়ায় তুরষ্কের বাইরে তাদের সর্ববৃহৎ সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে মুরতাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে সবধরণের সহায়তা করে যাচ্ছে।  

সোমালিয়ার হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে ন্যাটোর সদস্য তুরষ্ক আমেরিকা, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও দুনিয়ার সকল কুফফারদের মদদপুষ্ট দালাল সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য হারাকাতুশ শাবাব সোমালিয়ায় ক্রুসেডার আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক সকল কুফফার বাহিনীকে আক্রমণ করে থাকে।

আল্লাহর ইচ্ছায় সোমালিয়ার মূল ভূখণ্ডের প্রায় অধিকাংশ (যার আয়তন প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গকিলোমিটার) নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এই বিস্তীর্ণ ভূমিতে আল্লাহর শরিয়ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌।