*/

*/

From

টক-মিষ্টি জাম্বুরা লবণ-মরিচ দিয়ে মাখিয়ে খেতে ভীষণ ভালো লাগে! এর সালাদ বা জুস বানিয়েও খাওয়া হয়। এটি লেবু গোত্রের ফল হলেও এর স্বাদ অনেকটা আঙুরের মতো! জাম্বুরা ফল হিসেবে যেমন চমত্কার তেমনি এর পুষ্টিগুণও ব্যাপক! জাম্বুরার প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে – খাদ্যশক্তি- ৩৮ কিলোক্যালরি শর্করা- ৯.৬ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ১ গ্রাম চর্বি- ০.০ গ্রাম আমিষ- ০.৭ গ্রাম থায়ামিন- ০.০৩৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.০২৭ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- .২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.০৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি- ৬১ মিলিগ্রাম আয়রন- ০.১১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ৬ মিলিগ্রাম ম্যাংগানিজ- ০.০১৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ১৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ২১৬ মিলিগ্রাম সোডিয়াম- ১ মিলিগ্রাম জিংক- ০.০৮ মিলিগ্রাম রক্তনালির প্রদাহ কমাতে জাম্বুরার জুড়ি নেই! এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি ও বি দাঁত, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। জ্বর, মুখের ঘা ইত্যাদি সারাতে জাম্বুরা সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও পাকস্থলীর রোগ প্রতিরোধে জাম্বুরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

তাল এর ঔষধি গুণাগুণ

তাল কচি ও পাকা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়। তাল যেমন নানাভাবে খাওয়া যায়, তেমনি তালের পুষ্টিগুণও অনেক। কী আছে পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে- খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম আমিষ .৮ গ্রাম চর্বি .১ গ্রাম শর্করা ১০.৯ গ্রাম খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম আয়রন ১ মিলিগ্রাম থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন .০২ মিলিগ্রাম নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম তাল কিভাবে খাবেন তালসত্ত্ব : তালের রস ও চিনি দিয়ে বানানো হয় তালসত্ত্ব। তালের জুস : তালের রস, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। ডায়াবেটিক ও হৃদরোগীরা চিনি না দিয়ে খেতে পারবেন। তালের পিঠা : তালের গোলার সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি এবং কখনো নারিকেল দিয়ে তালের পিঠা বানানো হয়। তালের কেক : কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মেশানো হয়। তালের কেকের মধ্যে চিনি কম এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ডায়াবেটিক ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো খাবার হতে পারে। কাঁচা তালের রসের বরফিও তৈরি করা হয়। শুধু তালের শাঁস আলাদাভাবেও খাওয়া যায়। উপকারিতা * তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তাল ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে। * তাল ভিটামিন বি-এর আধার। তাই ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে। * তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। * কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভূমিকা রাখে। কারা খাবেন না * যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাঁরা ডিমের কুসুম ও দুধ থাকে এমন তালের খাবার খাবেন না। * যাঁদের ডায়াবেটিস কিংবা কোলেস্টেরল বেশি তাঁরা তালের পিঠা খাবেন না।

ছোলা এর পুষ্টিগুণ

ছোলা আমাদের দেশের অতিপরিচিত একটি ডাল। শুধুমাত্র রোজাই নয়, আজকাল আমরা সব সময় ছোলা খাই। ছোলায় অনেক পুষ্টি রয়েছে। এটা প্রোটিন গ্রুপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে পরিচিত। ছোলা শরীরের বেশ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে থাকে। এই ডালে রয়েছে উচ্চ আঁশ; তাই এটি ডাল হিসেবে অনেক উন্নত। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ছোলা খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা খুব ধীরে ধীরে বাড়লে এবং ছোলার আঁশ রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সেই জন্য ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে ছোলার কোনো জুরি নেই। তবে যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাঁরা ছোলা একেবারেই খাবেন না। শুধুমাত্র কার্বোহাইড্রেট, আঁশ বা প্রোটিন হিসেবে নয়, বেশ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল হিসেবে ছোলার কোনো জুড়ি নেই। এটি পরিপূর্ণ খাবার হিসেবেও খেতে পারেন। ছোলা থেকে বড় এবং ছোট সব পুষ্টিই পাওয়া যায়। তবে অনেককেই দেখা যায় ছোলা না ভিজিয়ে দ্রুত সিদ্ধ করে খেতে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মনে রাখবেন, ছোলাকে অবশ্যই সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হয়। অথবা সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ছয় ঘণ্টা ছোলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে ছোলার বাহ্যিক কেমিকেল এবং ফাইটিংসগুলো চলে যাবে। রোজা ছাড়াও যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁরা ছোলাটা একটি মিল হিসেবে রাখতে পারেন। বিশেষ করে ছোলার সঙ্গে যদি টক দই মিলিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে ফাস্ট ক্লাস এবং সেকেন্ড ক্লাস দুটো প্রোটিনই পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের ছোলা, টক দই, সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকের ডায়েটেশিয়ানরা। কেননা ছোলার আঁশ শরীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে আমাদের মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল সবই খেতে হয়। যার মধ্যে প্রাণিজ প্রোটিন ফার্স্ট ক্লাস আর সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে আমরা ডাল ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাঁদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা বাদ দেওয়া যাবে না। সেই জন্য মাছ, মাংস কমিয়ে প্রোটিনের সেই চাহিদা যদি ছোলা থেকে পূরণ করা যায় তবে সহসাই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারবেন। এ ছাড়া ছোলা আমাদের দেশে সাধারণত দুভাবে খাওয়া হয়। একটি হচ্ছে আস্ত ছোলা, যেটাকে আমরা অনেক সময় ভেজে খাই বা সিদ্ধ করে খাই। আরেকটি হচ্ছে ছোলার ছাতু। আমাদের গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় ছোলাকে গুঁড়ো করে এই ছাতু ব্যবহার করা হয়। যাঁদের ওজন বাড়ানো প্রয়োজন হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এবং বাচ্চাদের খাবারে এই ছোলার ছাতু ব্যবহার হয়ে থাকে। রোজার সময় প্রচুর তেল দিয়ে ছোলাকে ভুনে খাওয়া হয়। যেকোনো খাবারে অনেক পুষ্টি রয়েছে। আর এই পুষ্টি পাবেন আপনি রান্নার ওপর। তাই খুব বেশি তেল দিয়ে ছোলা ভুনে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট করবেন না। বরং ছোলা সিদ্ধ করে তার সঙ্গে টমেটো, শসা, কাঁচামরিচ, তার সঙ্গে একটু অলিভঅয়েল বা সরিষার তেল মিশিয়ে নিলে সেটাই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে।

আলু এর ঔষধি গুন ও এর উপকারিতা

আলু প্রায় সকলের পছন্দের একটি সবজি। বহুমুখি ব্যবহারের জন্য আলুকে নিয়ে রয়েছে নানা প্রবাদ। রমজানের ইফতার ও সেহরিতে প্রায় প্রতিটি বাড়ির খাবার টেবিলে থাকে আলুর তৈরি কোন না কোন পদ। আজ আমরা জানব আলুর গুণাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে। আলু সোলানেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি কার্বোহাইড্রেট ও কন্দযুক্ত শস্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম সোলানাম টিউবেরোজাম। বিশ্বে উচ্চহারে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত শস্যের তালিকায় আলুর স্থান চতুর্থ। আলুর উপকারিতা: আলুতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আছে ক্যারোটিনয়েড ও পলিফেনলের মতো প্রয়োজনীয় ফাইটোকেমিক্যাল। পুষ্টিমান বিবেচনায় আলুর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর কার্বোহাইড্রেট উপাদান। একটি মাঝারি আকারের আলুতে রয়েছে প্রায় ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। আলুর কার্বোহাইড্রেট অংশের উল্লেখযোগ্য অবস্থা হচ্ছে স্টার্চ। আর খুব সামান্য হলেও স্টার্চের একটি বিশেষ অংশ আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজে লাগে। রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ রান্নার পর শতকরা ৭ ভাগ এবং ঠান্ডা করার পর শতকরা ১৩ ভাগে উন্নীত হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ছালের ঠিক ভেতরের পাতলা স্তরে আলুর বেশিরভাগ পুষ্টি থাকে। এজন্য আলু ছোলা অর্থাৎ কাটা ও রান্নার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন, নয়তো পুষ্টিমান কমে যেতে পারে। গুনাগুণ: কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরিসমৃদ্ধ আলু আমাদের শারীরিক শক্তির উৎস। ভিটামিন সি, ভিটামিন-বি৬, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবারে সমৃদ্ধ থাকার কারণে আলু আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি খুব সহজেই মেটাতে পারে। মিষ্টি আলুতে ক্যালরি খুব কম এবং প্রায় ফ্যাট নেই বললেই চলে। তাই যাদের ক্ষেত্রে ক্যালরি ফ্যাটে সমস্যা তারাও আলু খেতে পারবে। আলুতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন-এ, যা খুবই প্রয়োজনীয়। এনার্জি বা শক্তি উৎপাদক হিসেবে আলু খুবই নির্ভরযোগ্য একটি খাদ্য। আলু থেকে প্রাপ্ত শক্তি লাইকোজেন হিসেবে মাংসপেশি ও লিভারে সঞ্চিত থাকে। তাই শারীরিক ব্যয়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য আলু একটি উত্তম খাদ্য। আলু কম মাত্রায় সোডিয়ামযুক্ত, প্রায় ফ্যাটমুক্ত ও সহজে হজমযোগ্য হওয়ার কারণে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা যায়। স্টমাক আলসার বা পাকস্থলীর ক্ষত নিরাময়ে ও কোলন বা অন্ত্রের ফুলে যাওয়ায় আলু খুবই উপকারী। উচ্চমানের ফাইভার থাকায় হেমোরয়েড বা অর্শ্ব রোগেও আলু খুব সাহায্য করে থাকে। উচ্চমানের ভিটামিন এ এর সমৃদ্ধতার কারণে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি ও এপিথেলিয়াল টিস্যুযুক্ত। অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে আলু সাহায্য করতে পারে। আলু রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি একটি উপকারী খাদ্য। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধেও আলু সাহায্য করে থাকে। পটাশিয়াম থাকার কারণে আলু আমাদের দেহ কোষে ইলেক্ট্রোলাইট ও ফ্লুইডের সমতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। হার্টের স্বাভাবিক কাজকর্মে সাহায্য করার পাশাপাশি ব্লাডপ্রেসারও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

লটকন এর ঔষধি গুনাগুন

লটকন (বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana) এক প্রকার টক মিষ্টি ফল। লটকন নানা নামে পরিচিত, যেমন- Rambai, Rambi, Mafai-farang, Lamkhae, Ra mai ইত্যাদি।[১] গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বানিজ্যিক চাষ হয়। লটকন বৃক্ষ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়, এর কান্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরণের হলুদ ফুল হয়, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা থোকায় থোকায় ধরে। ফলের রঙ হলুদ। ফলে ২-৫ টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়।[১] এর কাঠ নিম্নমানের। ছায়াযুক্ত স্থানেই এটি ভাল জন্মে।[২] লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন- হাড়ফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি।[২] লটকনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা পুষ্টিগুণ : লটকনে আছে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের ভিটামিন ‘বি'। এতে ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২ আছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ০৪ মিলিগ্রাম এবং ০.২০ মিলিগ্রাম। পাকা লটকন খাদ্যমানের দিক দিয়ে খুবই সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনের কোয়ায় খাদ্যশক্তি থাকে প্রায় ৯২ কিলোক্যালরি। অবাক বিষয় হলো এতে ক্যালরি আছে আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ। লটকনে ভিটামিন ‘সি' আছে প্রচুর। সিজনের সময় প্রতিদিন দুই-তিনটি লটকন খাওয়া মানেই আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন ‘সি'র চাহিদা পূরণ হওয়া। এ ছাড়া এ ফলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে চর্বি, আমিষ, লৌহ এবং খনিজ পদার্থ। উপকারিতা : লটকন খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় সহজেই। তৃষ্ণাও নিবারণ করে। মানসিক চাপ কমায় এ ফল। এর গাছের ছাল ও পাতা খেলে চর্মরোগ দূর হয়। লটকন গাছের শুকনো গুঁড়ো পাতা ডায়রিয়া বেশ দ্রুত উপশম হয়। এর গাছের পাতা ও মূল খেলে পেটের পীড়া ও পুরান জ্বর নিরাময় হয়। এমনকি গনোরিয়া রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এ ফলের বীজ। তবে এ ফল বেশি মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। তাতে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। সিজনের সময় প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। এ ফল মুখের রুচি বাড়ায়। লটকন শিশু ও মেয়েদের প্রিয় ফল।

কচুর ঔষুধি গুনাগুন

কচু অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু দেখতে পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে কানাচে, বিভিন্ন পতিত জমিতে অনাদরে-অবহেলাতেই জন্মে যেতে পারে এই কচু। বহু জাতের কচু রয়েছে। কিছু কিছু জাতের কচু রীতিমত যত্নের সাথে চাষ করতে হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও সৌন্দর্যের কারণে কিছু কিছু প্রজাতির কচু টবে ও বাগানে চাষ করা হয়। এদের মধ্যে কতগুলোর রয়েছে বেশ বাহারী পাতা, আবার কতগুলোর রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ফুল। কচুর উৎপত্তি- অনুমান করা হয়, কচুর উৎপত্তি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। প্রায় দু'হাজার বছর আগেও কচুর চাষ হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্থলভূমি ও জলভুমি উভয় স্থানে কচু জন্মাতে পারে। তবে স্থলভাগে জন্মানো কচুর সংখ্যাই বেশি। কচুর বহু আয়ূর্বেদীয় গুনাগুন আছে বলে দাবি করা হয়। বিভিন্ন রকম কচু- বনে জঙ্গলে যেসব কচু আপনাআপনি জন্মায় সেগুলোকে সাধারণত বুনো কচু বলা হয়। এর সবগুলো মানুষের খাবারের উপযোগী নয়। খাবার উপযোগী জাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে মুখীকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, ওলকচু, দুধকচু, মানকচু, শোলাকচু ইত্যাদি। মুখী কচু- মুখী কচু একটি সুস্বাদু সবজি । এ সবজি খরিফ মৌসুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এর চাষ হয়। মুখী কচু বাংলাদেশের গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু, ইত্যাদি নামে ও পরিচিত।মুখী কচুতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ’ এবং লৌহ থাকে। ওল কচু- এতে পুষ্টি ও ঔষধি মূল্য উভয়ই বিদ্যমান এবং সাধারণত রান্না করে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে এটি গ্রীষ্ম মৌসুমে জন্মে যখন বাজারে সবজির খুব ঘাটতি থাকে। ওল কচুর রস, উচ্চরক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এর আবাদ হয়। মান কচু- মান কচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা এ দেশের ঘরে ঘরে প্রচলিত রয়েছে। কচু শাকে পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে। পাইন্যা কচু- পানিতে হয় বলে সম্ভবতই এর নাম পানি কচু। তবে বেশির ভাগ মানুষের কাছে পাইন্যা কচু হিসেবে পরিচিত। পানি কচুই হোক কিংবা পাইন্যা কচুই হোক সব্জি হিসেবে এর গুরুত্ব ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি একটি জনপ্রিয সব্জি। কারণ এর স্বাদ এবং পুষ্টিমান ও অত্যাধিক, রান্না করাও সহজ। কচু দিয়ে রান্না- প্রজাতিভেদে কচুর মুল, শিকড় বা লতি, পাতা ও ডাটা সবই মানুষের খাদ্য। কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ অনেকেরই খাদ্য তালিকায় পছন্দের মধ্যে আছে। এছাড়াও কচুর লতি চচ্চড়ি, কচুর লতির ভুনা, কচুর লতির ইলিশ, কচুর লতির কোরমা, সরিষা বাটায় কচুর লতি আরও কত রকমের খাবার যে রান্না করা যায় তার ইয়ত্তা নেই। কচুর উপকারিতা- - কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে “ভিটামিন এ” থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত উপকারী। - কচু আঁশ জাতীয় হওয়ায় এটি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। - কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় শক্ত করতে সহায়তা করে। - চুলের ভঙ্গুরতাও বন্ধতেও কচুর উপকারিতা অনেক। - কচুতে আয়োডিনের পরিমাণও অনেক। - যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি রয়েছে তাদের জন্য কচু অনেক উপকারী। - কচুর লতিতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এটি। বিদেশের বাজারে দেশী কচুর লতি- দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে কচুর লতি। কচুর লতি ঢাকা, জয়দেবপুর, টাঙ্গাইল, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ গত ক'বছর ধরে গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বাজারে এ লতি বাজারজাত করা হচ্ছে। সকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে বিদেশের বাজারে এই লতির লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব।

কলা এর ঔষুধি গুনাগুন

আপনি কি কলা খেতে ভালবাসেন? যদি বাসেন তবে এই লেখা পড়ার পর আপনার ভালবাসা বাড়বে বই কমবে না। আর যদি না বাসেন, তবে ভালবাসতে শুরু করবেন কিনা জানি না, তবে হ্যাঁ, কলার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বাধ্য। মুহূর্তের মধ্যে এনার্জি পেতে কলার জুরি মেলা ভার। কিন্তি তা ছাড়াও যে প্রচুর কাজ করে কলা। জেনে নিন কলার বহুগুণ- অবসাদ অবসাদে ভোগা কিছু মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে কলা খেলে ভাল বোধ করেন তারা। কলার মধ্যে থাকা ট্রিপটোফ্যান প্রোটিন মানুষের শরীরে পরিণত করে সিরোটোনিন হরমোনে। সিরোটোনিন হরমোন অফ হ্যাপিনেস নামে পরিচিত। শরীরে এই হরমোনের মাত্রা বাড়লে মুড ভাল হয়ে রিল্যাক্স বোধ করে মানুষ। মুড অফ একটি অতি পরিচিত প্রি-মেন্সট্রয়াল সিনড্রোম। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি৬ শরীরে গ্লুকোজের সামঞ্জস্য বজায় রেখে মুড ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অ্যানিমিয়া কলার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমান আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্‍পাদনে সাহায্য করে। ফলে অ্যামিনিয়ার সম্ভবনা কমে। এমনকী, অ্যামিনিয়া সারাতেও সাহায্য করে কলা। রক্তচাপ কলার মধ্যে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি অথচ নুনের মাত্রা কম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা রুখতে পারে কলা। ইউ ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কলার এই গুণের কথা মাথায় রেখে স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধে কলার ব্যবহার সুপারিশ করেছে। মস্তিষ্ক টানা ১ বছর ধরে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের টুইকেনহ্যাম স্কুলের ২০০ জন পড়ুয়ার ওপর। পরীক্ষার আগে টানা ব্রেকফাস্ট, ব্রাঞ্চ ও লাঞ্চে কলা খাওয়ানো হয় তাদের। দেখা গিয়েছিল কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম তাদের মনসংযোগ বাড়ানোর ফলে অন্যদের থেকে পরীক্ষায় ভাল করেছিলেন ওই ২০০ জন পড়ুয়া। কনসটিপেশন কলার মধ্যে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকায় পেট পরিষ্কার রাখতে কলা অপরিহার্য্য। হ্যাংওভার আগের রাতের অতিরিক্ত মদ্যপানের হ্যাংওভার কাটাতে বানান মিল্কশেকের কোনও তুলনা নেই। সঙ্গে যদি থাকে ১ চামচ মধু। কলা শরীরের অস্বস্তি কমায়, দুধ পেট ঠান্ডা করে ও মধু বজায় রাখে রক্তে শর্করার মাত্রা। ফলে অম্বলের হাত থেকেও রেহাই পায় শরীর। মর্নিং সিকনেস কাজের চাপ, মানসিক চাপে অনেক সময়ই সকালে ঘুম থেকে উঠে অসুস্থ বোধ করি আমরা। রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকায় কম থাকে এনার্জির মাত্রাও। এই সময় কলা বজায় রাখতে রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রা। মশার কামড় মশার কামড়ে ফুলে, লাল হয়ে ওঠা ত্বকের যত্ন নিতে ক্রিম বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার আগে কলার খোসা ঘষে দেখুন ত্বকের ফুলে ওঠা অংশে। স্নায়ু কলায় থাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি যা স্নায়ুকে শান্ত করে। মানসিক চাপ কাটাতে ফ্যাটি ফুডের থেকে বেশি প্রয়োজনীয় কলা। কার্বোহাইড্রেটে পরিপূর্ণ হওয়ায় কলা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে স্নায়বিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আলসার নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের সমস্যায় খুবই উপকারী খাবার কলা। অত্যন্ত খারাপ পেটের রোগেও কলাই একমাত্র ফল যা নির্বিঘ্নে খাওয়া যেতে পারে। কলা অস্বস্তি কমিয়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। তাপমাত্রা নিয়নন্ত্রণ অনেক দেশে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে খাওয়ানো হয় কলা। তাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

পেয়ারার ঔষুধি গুনাগুন

আমাদের দেশসহ এশিয়ান দেশগুলোতে পেয়ারা খুব সাধারণ ও সহজলভ্য ফল। পশ্চিমা দেশ গুলোতেও এটি পাওয়া যায়। স্বাদ ও গন্ধ ছাড়াও পেয়ারার অনেক গুণাগুণ রয়েছে। শুধু ফলেই না এর গাছের পাতা ও বাকলেরও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। পুষ্টিগুণ পেয়ারায় অনেক বেশি ভিটামিন সি ও এ রয়েছে। জেনে অবাক হবেন, একটি পেয়ারাতে সমান আকৃতির একটি কমলার ৪ গুন এবং একটি লেবুর ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি২, কে, আঁশ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, ফোলেট ও ম্যাঙ্গানিজ। এতে কোনো চর্বি নেই। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রন্ধন প্রক্রিয়ায় এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পেয়ারার জুস একটি শক্তিদায়ক পানীয়। স্বাস্থ্য উপকারিতা ১) মুখ গহ্বরের পরিচর্যায় দাঁতে প্লাক জমা মুখের ভেতরের একটি বড় সমস্যা। পেয়ারা পাতা এন্টিপ্লাক বিশিষ্টের জন্য খুব কার্যকর। ভেষজবিদরা মুখ গহ্বরের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য কচি পেয়ারা পাতার পেস্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এই পাতার প্রদাহনাশক, বেদনাশক এবং জীবানুনাশক গুণাগুণের জন্য এটা মাড়ির প্রদাহ, মাড়ির ফোলা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে, দাঁতের ব্যাথা, মুখের ঘা সারাতে বেশ কার্যকর। পেয়ারা গাছের ডাল দাঁতের মাজন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন ১/২ টি পেয়ারা পাতা মুখে নিয়ে চিবালে ভালো ফল পাবেন। পেয়ারা পাতা দিয়ে তৈরি করতে পারেন মাউথওয়াশ, ৫/৬টি পেয়ারা পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করে সেই পানি দিয়ে দিনে ১/২ বার কুলি করতে পারেন। ২) উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে ১৯৯৩ সালে “Journal of Human Hypertension” এ প্রকাশিত হয় যে নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্ত চাপ ও রক্তের লিপিড কমে কারণ পেয়ারাতে উচ্চ পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং দ্রবনীয় আঁশ থাকে। পটাশিয়াম নিয়মিত হৃদস্পন্দনের এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। পেয়ারা পাতা ভালো করে শুকিয়ে চা বানিয়ে খেলে সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল, খারাপ কোলেস্টেরল (LDL)এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়। ৩) ডায়রিয়ার চিকিৎসায় পেয়ারা পাতার চা ব্যাকটেরিয়ার কারণে সংঘটিত ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে। কারণ এটার রস “Stephylococcus Aureus” নামক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। তাই ডায়রিয়া হলে দিনে কয়েকবার এই চা খেলে পায়খানার পরিমাণ, পানির মতো ভাব, পেট ব্যাথা কমিয়ে দ্রুত সুস্থ করে তুলবে। পেয়ারার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণের জন্য হজম ক্রিয়া ভালো হয়, এটা ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং এর আঁশ হজম ও নিঃসরণকে উন্নত করে। ৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অনেকবছর ধরে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় চীনা ঔষধে পেয়ারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে “The American journal of Chinese medicine” এ প্রকাশিত হয় যে, পেয়ারার রসের হাইপোগ্লাইসেমিক গুণের প্রভাব ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। উচ্চআঁশ ও নিম্নগ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পেয়ারা রক্তের সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া যারা ডায়াবেটিসের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে পেয়ারা পাতার চা ও খেতে পারেন। কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে তারপর ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন প্রতিদিন। ৫) দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ পেয়ারা দেহকে ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশিসহ অসংখ্য রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন ১টি পেয়ারা বা এর তৈরি সালাদ, স্মোদি বা পেয়ারা পাতার চা বানিয়ে খেতে পারেন। ৬) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় পেয়ারাতে থাকা বেশ কিছু যৌগিক পদার্থ যেমন- লাইকোপিন, ভিটামিন সি এবং বেশ কিছু পলিফেনল থাকাতে এর রয়েছে ক্যান্সার ও টিউমার বিরোধী গুণাগুণ। এগুলো শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা মুক্ত র‍্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে দেহকে রক্ষা করে। ২০১০ সালে প্রকাশিত “Nutrition & Cancer” জার্নালে গবেষকরা বলেন, পেয়ারার রস প্রোস্টেট টিউমারের আকার ছোট করে এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া নিয়মিতভাবে পেয়ারা খেলে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ৭) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে পেয়ারাতে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে, কর্নিয়াকে সুস্থ, স্বচ্ছ রাখতে ও চোখের কোষকে সুরক্ষিত রাখতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া এর ভিটামিন সি কৌশিক নালীকে উন্নত করে রেটিনাল কোষের সঠিক কার্যক্রমে সাহায্য করে। তাই খাবারের মাঝে কাঁচা পেয়ারা বা এর জুস রাখলে তা দৃষ্টিশক্তির জন্য ভালো। ৮) জ্ঞানশক্তিকে উদ্দীপিত করতে পেয়ারার দ্বারা মস্তিস্কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সুস্থ রাখা সম্ভব। এই সেরা খাবারটি জ্ঞানশক্তিকে উদ্দীপিত করার সাথে সাথে মনোযোগকে তীক্ষ্ণ করে। শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকার কারণে এ ফলটি মানসিক ও মস্তিস্কের কার্যক্রমকে উন্নত করে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন বি৩ ও বি৬ মস্তিস্কের রক্ত চলাচলকে উন্নত করতে সাহায্য করে। পেয়ারাতে থাকা পটাশিয়াম মস্তিস্কের তড়িৎ পরিবহনে সাহায্য করে যা চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তিকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফলটি রাখতে ভুলবেন না। ৯) সুস্থ ত্বকের জন্য বিশেষ করে গোলাপি পেয়ারাতে রয়েছে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষকে নষ্ট করার জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে। ফ্রি র‍্যাডিকেলের জন্য সাধারণত ত্বকে বয়সের চিহ্ন যেমন- শুষ্ক, রুক্ষ, ভাঁজ ও অনুজ্জ্বলতার ছাপ পড়ে। ত্বকের নমনীয়তা ও ইলাস্ট্রিসিটি রক্ষা করে পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন সি। এছাড়া পেয়ারা ও এর পাতার সংকোচন বৈশিষ্টের কারণে এটা আমাদের ত্বককে উন্নত করতে, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির থেকে এবং ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ ও ফুসকুড়ি থেকে রক্ষা করে। তাই সুন্দর ত্বক পেতে পেয়ারা খেতে পারেন অথবা কচি পাতা বা পেয়ারা পেস্ট করে মুখে মাখতে পারেন। ১০) থাইরয়েডের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে থাইরয়েড জন্য উপকারী কপারের খুব ভালো উৎস হচ্ছে পেয়ারা। এটি আমাদের দেহের খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা দেহের হরমোন ও অর্গান সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর কপার দেহের হরমোন উৎপাদন ও শোষণকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য এবং এর পটাশিয়াম ও শক্তিশালী প্রদাহ নিরামক গুণাগুণ থাইরয়েডের কাজকে উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার জন্য পেয়ারা ও পেয়ারা পাতাকে খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে নিতে হবে। এছাড়াও পেয়ারা দেহের শক্তি বৃদ্ধি ও ওজন কমানোর কাজকে সহজ করে দেয়।

Report Page