*/

*/

From

লেবু এর ঔষধি গুনাগুন

লেবু হল সাইট্রাস লিমন (Citrus limon) সাধারণ নাম। বংশবৃদ্ধিকারী টিস্যু আবৃতবীজীলেবুর বীজকে ঘিরে রাখে। লেবু রান্না করে বা রান্না না করে - উভয়ভাবেই খাওয়া হয়। ফল এর কদর মূলত রসের জন্যেই , যদিও এর শাঁস ও খোসাও ব্যবহৃত হয়, প্রধানত রান্না ও বেকারির কাজে। লেবুর রসে প্রায় ৫ শতাংশ (প্রতি লিটারে ০.৩ মোলের কাছাকাছি) সাইট্রিক এসিড থাকে যার কারণে এর স্বাদ টক হয় এবং pH ২-৩ হয়। লেবু ভিটামিন ‘সি’তে ভরা। এই সাদাসিধে তথ্যটা তো আমরা সবাই জানি। অতিপরিচিত এই লেবুর আছে অনন্য সব রোগপ্রতিরোধী গুণ। কী সেই গুণ? কেনই বা লেবুকে যত্ন করে খেতে হবে? আদ্যোপান্ত জানতে কথা বলেছিলাম পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক আলেয়া মাওলার সঙ্গে। তিনি জানালেন, প্রতিদিনই নিয়ম করে লেবু খাওয়া উচিত। লেবু একদিকে যেমন রোগপ্রতিরোধী, অন্যদিকে শরীরকে সুরক্ষাও দেয়। ছোটবেলা থেকেই লেবু খাওয়ায় অভ্যস্ত হতে হবে। শরীরে ভিটামিনের চাহিদাও মিটবে, আবার রোগের বিরুদ্ধেও লড়তে সাহায্য করবে লেবু। গলাব্যথায় কখনো ঠান্ডা লেগে আবার কখনো সংক্রমণে গলাব্যথা হয়। হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকলে এই ব্যথা ক্রমে বাড়তেই থাকে। এই ব্যথা কমাতে লেবুর রস বেশ উপকারী। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে কুলকুচি করুন। কমবে গলাব্যথা। শ্বাসকষ্টে যাঁদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তাঁরা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যাঁরা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাঁদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে। লিভারের সমস্যায় যাঁরা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘদিন, তাঁরা লেবু খাবেন নিয়ম করে। উষ্ণ কিংবা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খাবারের আধা ঘণ্টা আগে খেয়ে নিন, উপকৃত হবেন। সর্দি-কাশিতে ঋতুর পালাবদলের সময় প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন লাগে, তাতে হঠাৎ করে শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। লেগে যায় সর্দি-কাশি। এই সর্দি-কাশির বিরুদ্ধেও লড়তে পারে লেবু। তাই সর্দি-কাশিতে হাতের কাছেই রাখুন লেবু। আর্থ্রাইটিস আর্থ্রাইটিস হলো হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা, আবার কখনো ফুলে যায় সংযোগস্থলগুলো। বড্ড বিরক্তিকর এই রোগ উপশমের ভালো দাওয়াই কিন্তু লেবু। লেবুতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ যা আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। রোদে পোড়া ত্বক লেবুর উপাদানগুলো একদিকে যেমন আমাদের ত্বকের সুরক্ষা দেয়, অন্যদিকে তীব্র রোদে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দেখভালেও লেবু অত্যন্ত কার্যকরী। তাই লেবু তো খাবেনই, সেই সঙ্গে রোদে পুড়ে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগান, ভালো হয়ে যাবেন। হজমে লেবু উৎসবে-পার্বণে এ বাড়ি-ও বাড়ি ঘুরে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে! স্বস্তি পেতে লেবু খেয়ে নিন। দ্রুত হজমে সাহায্য করবে। আরেক বাড়ি দাওয়াত খাওয়ার প্রস্তুতিও নিতে পারবেন অল্প সময়ে। ওজনও কমবে লেবুতে আয়েশ করে ভূরিভোজের পর লেবু খেয়ে নিন। খাবারগুলো হজমে সাহায্য তো করবেই, উপরন্তু শরীরে চর্বি জমতে বাধা দেবে লেবু। বুঝতেই পারছেন, নিয়ম করে লেবু খেলে আপনার ওজনও কমবে।

লজ্জাবতী গাছ এর ঔষধি গুণাগুণ

উদ্ভিদের নাম:- লাজ্জাবতী Lazzaboti স্হানীয় নাম: লজ্জাবতী, সমঙ্গা, লজ্জালু, অঞ্জলিকারিকা ভেষজ নামঃ- Mimosa pudica Linn ফ্যমিলিঃ- Leguminosae ব্যবহার্য অংশঃ-পাতা, ফুল ও সমগ্র লতা পাতা। রোপনের সময়ঃ-বছরের সবসময় রোপণ করা যায় । উত্তোলনের সময়:- বছরের যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়। বারো মাসই ফুল ও ফল হয়। তবে সাধারনতঃ জুলাই থেকে ডিসেম্বর মধ্যে ফুল ও ফল বেশী হয়।প্রত্যেক শুটিতে ৩/৪ টি বীজ থাকে। ফলের মধ্যে ধূসর বর্ণের ছোট ছোট কাঁটা আছে। আবাদী/অনাবাদী/বনজঃ- সাধারনতঃ বনজ আবস্থায় জন্মে। তবে অনেকে চাষ করে থাকে। প্রাপ্তিস্থানঃ-উপমহাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়, বাংলাদেশে ও অসমে এর প্রাচুর্য বেশী। বিবরণঃ- এই গাছটি গুল্ম জাতীয় গাছ। স্পর্ষকাতর গুল্ম লজ্জাবতী লতাটি গড়িয়ে গড়িয়ে বেড়ে যায়। এর গায়ে অসম্ভব বাঁকা কাঁটা নীচের দিকে থাকে। প্রবাদ আছে এর ভিতর দিয়ে সাপ চালাচল করেনা।পাতার বোঁটা এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা। পাতা গুলি ঠিক বিপরীতভাবে সন্নিবেসিত। স্পর্শ করলেই পাতা বুঁজে যায়। পুষ্পদন্ড ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা। ফুল তুলার মত নরম ও ফিকে লাল বর্ণের বা কিছুটা বেগুনী বর্ণের হয়। ঔষধি গুণাগুণঃ- এই উদ্ভিদটি প্রকৃতিতে একটু ভিন্ন প্রকারের। স্পর্ষের সাথে সাথে এটি গুটিয়ে যায় বলে এর নাম লজ্জাবতী নাম হয়েছে। এ কারনে হয়তো এর প্রতি অনেকে আকৃষ্ট হয়। এর মাঝে হয়ত অন্য কোনো রহস্যও থাকতে পারে। এনিয়ে আরো গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে। এ উদ্ভিদের অনেক ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। হাত পা জ্বালায়, অর্শ রোগে, রক্তপিত্তে, যোনি ক্ষতে, নাড়ী সরে আসায়, আঁধারযোনি ক্ষতে, আমাশয়, দমকা ভেদ, মল কাঠিন্যে, বিসর্পে, দাঁতের মাড়ি ক্ষতে, বগলে দুর্গন্ধ, দুষ্ট ক্ষতে, পোড়া নারিঙ্গায়, হারিশে, কানের পুঁজে, রমনে অতৃপ্তি, মিথুন দন্ডের শৈথিল্যে, গ্রন্থিবাত, কুজ্জতায়, সংগ্রহ গ্রহণী রোগ ইত্যাদিতে এর ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। হাত পা জ্বালায়ঃ- হাত পা জ্বালার সাথে জ্বরও থাকে।এটা সাধারনতঃ বর্ষা ও শরৎকালে পিত্ত বিকারে দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর সমগ্রাংশ (গাছ মূল পাতা)১০ গ্রাম ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ ক’রে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে এই ক্বাথটা খেলে ঋতুগত পিত্ত বিকারে ও তজ্জনিত উপসর্গের উপসম হয়। অর্শ রোগঃ- অর্শের বলিতে জ্বালা বেশী। ঝাল না খেয়েও যেন সেই রকম জ্বালাবোধ। তার সঙ্গে রক্তস্রাবও বেশী হোতে থাকে। এক্ষেত্রে গাছে ও মূলে ১০ গ্রাম আন্দাজ ১ কাপ দুধ ও ৩ কাপ পানি এক সঙ্গে মিশিয়ে একত্রে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে এটা প্রত্যহ সকাল বিকাল ২ বার খেতে হবে। ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়। রক্তপিত্তেঃ- গলাটায় মনে হয় কাঁটা ফুঁটেছে, এর সঙ্গে একটা কাশি আসে, আর রক্ত পড়ে, বুকে পিঠে কোনো ব্যথা নেই, এমন কি অর্শ নেই, দাস্ত হওয়ার পর জ্বালা যন্ত্রনাও হয় না,অথচ টাটকা রক্ত পড়ে; এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে মাত্রা মত তৈরী করে ঐ ক্বাথটা সকালে বিকালে দুইবার খেলে রক্তস্রুতি বন্ধ হয়ে যায়। যোনি ক্ষতেঃ- এটার প্রাথমিক স্তরে মাঝে মাঝে অথবা প্রায় রোজই অল্প অল্প স্রাব চলতে থাকে, একটা আঁশটে গন্ধ, কখনো বা একটু লালচে স্রাব; এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাবধান করে থাকেন-এটার পরিনামে ক্যনসার হোতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুধে পানিতে সিদ্ধ করা লজ্জাবতীর ক্বাথ খেলে এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাছাড়া গাছের ক্বাথ দিয়ে ডুস্‌ দিয়ে ধোয়ালে তাড়াতাড়ি সেরে যায়। ক্বাথ তৈরী করার পদ্ধতি পূর্বে উল্লেখ আছে। নাড়ী সরে আসায়ঃ- বহু সন্তানের জননী অথবা প্রসবের সময় ধাত্রীর অসাবধানতায় নাড়ী সরে এসেছে, উঁচু হয়ে বসতে গেলে অস্বস্তি বোধ, এক্ষেত্রে গাছে মূলে ১০ গ্রাম আন্দাজ গাছপাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে এটা প্রত্যহ সকাল বিকাল ২ বার খেতে হবে। আর ঐভাবে ক্বাথ তৈরী করে ডুস্‌ দেওয়া, এর দ্বারা ওটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। আঁধারযোনি ক্ষতেঃ- এই বিচিত্র রোগটি কৃষ্ণপক্ষে বেড়ে যায় আর শুক্রপক্ষে শুকোতে থাকে; এই ক্ষতটি হয় সাধারনতঃ হাঁটুর নীচে নিম্নাংশে, আর নাহয় কুচকীর দুধারে। এ ক্ষেত্রে মূল বাদ দিয়ে গাছ ও পাতা ১০ গ্রাম শুধু পানি দিয়ে ক্বাথ করে খেতে হয়। এবং ঐ ক্বাথ দিয়ে মুছতে হয়। রোগ সারা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়। আমাশয়ঃ- অনেকদিনকার পুরনো, বেগ হলে আর দাঁড়ানো যায়না, গিয়ে প্রথমে যা হোলো তারপর আর হতে চায়না; তারপর আবার অনেকের শক্ত মলের গায়ে সাদা সাদা জড়ানো আম।এ ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর ডাঁটা পাতা মিলিয়ে ১০ গ্রাম সিদ্ধ করে ছেঁকে খেতে হবে।আর যাদের আমযুক্ত গাঁজলা দাস্ত হয় তাঁরা শুধু ৫/৬ গ্রাম সিদ্ধ করে ছেঁকে ঐ পানিটা খেতে হবে। দমকা ভেদঃ-২/৩ দিন পেট স্তব্ধ হয়ে থাকে আর্থাৎ পেট ধুম মেরে থাকে,হঠাৎ একদিন দম্‌কা ভেদ হয়। যা অগ্নিমান্দাজনিত অজীর্ণ। এ ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর শিকড়ের ছাল২/৩ গ্রামে, এর সঙ্গে শুধুপাতা ৪ গ্রাম একসঙ্গে সিদ্ধ করে ছেঁকে পানিটা খেতে হবে।

শসা এর ঔষধি গুণাগুণ

শসা (Cucumis sativus) গোর্ড পরিবার কিউকারবিটাসের অন্তর্গত একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। শসা এক প্রকারের ফল। লতানো উদ্ভিদে জন্মানো ফলটি লম্বাটে আকৃতির এবং প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর বাইরের রঙ সবুজ। তবে পাকলে হলুদ হয়। ভেতরে সাদাটে সবুজ রঙের হয়, এবং মধ্যভাগে বিচি থাকে। এটি কাঁচা খাওয়া হয় বা সালাদ তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। এর উৎপত্তি ভারতবর্ষে হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই জন্মে। এটি সাধারণতঃ গরমের সময় বেশি পাওয়া যায়। বেশ কয়েক জাতের শসা রয়েছে। শশা এক রকমের ফল । এটা দেখতে সবুজ রঙের লম্বা আকারের হয়ে থাকে । এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং জলের পরিমাণ বেশী থাকে । খোসা সহ একটি কাচা শশা'র প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরীর পরিমাণ ২০ কিলো ক্যালরী। বাংলাদেশে শশা প্রধাণত সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শশাকে যতোই সাদাসিধে মনে হোক না কেন খাদ্যগুণ বিচারে এটি অনন্য। শশার জলীয় অংশ শতকরা ৯৫ভাগ। এটি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শরীরের ভেতরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে ও শরীর শীতল রাখতে সহায়তা করে। শশায় ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। প্রতি ১০০ গ্রামে আছে মাত্র ১৫ ক্যালরি। এতে কোনো সম্পৃক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই। সাদাসিধে এই শশার খোসার গুণও খুব একটা কম নয়। খোসাসহ শশা খাবার অভ্যাস আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য কে কমিয়ে দেবে অনেকখানি এবং আপনার অন্ত্র থেকে দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিয়ে অন্ত্রের ক্যান্সারের মত রোগ থেকে আপনাকে দেবে সুরক্ষা। শশায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। এই পটাশিয়ামকে বিশেষজ্ঞরা হৃদযন্ত্রের বন্ধু বলে থাকেন। কারণ এটি রক্তচাপ কমিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শশায় পানি এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি কিছুটা প্রস্রাব বৃদ্ধি করে,ফলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। এছাড়া নিয়মিত শশা খেলে দেহের ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রনে থাকে,ফলে কিডনি ও মূত্রথলিতে পাথর হবার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। শশায় বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, লুটেইন প্রভৃতি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীরে উৎপন্ন হওয়া ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলগুলো থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো। তারুণ্য ধরে রাখতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর জুড়ি নেই। এছাড়াও শশায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে। ভিটামিন কে আমাদের দেহের হাড়গুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় আলঝেইমার ডিজিজ এর মত স্নায়ু রোগ প্রতিরোধে শশা ভূমিকা রাখে বলে সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। সৌন্দর্য চর্চায়ও শশার রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা। ত্বকের নানাবিধ সমস্যা, চোখের চারপাশের ফোলাভাব,কালো দাগ দুর করে ত্বককে প্রাণবন্ত ও সজীব করে তোলে শশা। তাই নানারকম গুণে সমৃদ্ধ এই শশাকে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় স্থান করে দিতে ভুলবেন না।

গাজর এর ঔষধি গুনাগুন

কমলা রঙের সবজি গাজর দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন একইভাবে এই সবজিটির স্বাস্থ্য উপকারিতাও অসাধারণ। আকর্ষনীয় রঙ ও স্বাদের জন্য ছোট বড় সবার কাছেই এই সবজিটি জনপ্রিয়। গাজরের প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে যা আমাদের শরীর ও ত্বক দুটির জন্যই খুবই উপকারী। গাজরের পুষ্টি উপাদান প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে আছে ক্যারোটিন ১০, ৫২০ মাইক্রোগ্রাম, শর্করা ১২.৭ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৮৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭.০ মি. গ্রাম, আয়রণ ২.২ মি গ্রাম, ভিটামিন বি১ ০০.০৪ মি. গ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মি. গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মি. গ্রাম, আঁশ ১.২ গ্রাম, অন্যান্য খনিজ ০.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫৭ ক্যালরি। গাজরের স্বাস্থ্য উপকারিতা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়িয়ে তুলে চোখকে ভালো রাখতে গাজর অতুলনীয়। এতে আছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের লিভারে গিয়ে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। পরে সেটি চোখের রেটিনায় গিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি যারা রাতে চোখে কম দেখেন তাদের জন্যও গাজর একটি আদর্শ খাদ্য উপাদান। সমীক্ষায় দেখে যে গাজর ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। গাজরের বিদ্যমান ফ্যালক্যারিনল ও ফ্যালক্যারিডিওল উপাদান ক্যান্সারের ক্ষতিকর কোষ গঠনে বাধা প্রদান করে। প্রতিদিন অন্তত একটি করে গাজর খাওয়াও আপনাকে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ থেকে দূরে রাখে। প্রায় সময়ই আমাদের শরীরের কোথাও কেটে ছিঁড়ে গেলে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়ে যায়। এই সংক্রমণ রোধে গাজর খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। খানিকটা গাজর নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিন। হৃদরোগের ক্ষেত্রেও গাজর ভালো কাজ করে। গাজরের ক্যারোটিনয়েডগুলো হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখের ওষুধস্বরূকাজ করে। তাই আপনি যদি গাজর শুধু শুধু চিবিয়েও খেতে পারেন তাতেই আপনার হৃদরোগের বিরুদ্ধে বেশ ভালো একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই ওজন কমানোর পাল্লায় পড়ে কতশত ডায়েট চাট ও খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে চলি। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য আপনি যদি গাজর ডায়েট হিসেবে বেছে নেন তাহলে আপনার ওজন কমানোর ঝামেলা অনেকখানিই কমে যাবে। হালকা ক্ষিদাভাব হলেই আজেবাজে জিনিস না খেয়ে একটা গাজর খান। গাজরের সৌন্দর্য উপকারিতা ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও পটাশিয়াম না থাকায় ত্বক এমনিতেই শুষ্ক হয়ে যায়। তাই শীতে ত্বকের শুষ্কতা রোধে যদি গাজরের জুস করে খান তাহলে ত্বক থাকবে নরম আর কোমল। আপনি যদি নিয়মিত গাজর খান তাহলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক ভালো থাকবে। গাজর খেলে বাহ্যিক ক্ষতি থেকে ত্বক রক্ষা পায় এবং ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। নিয়মিত খাবার তালিকায় গাজর রাখলে শরীরের বয়সজনিত ক্ষতিগুলো কম হয়। বয়সের কারণে কোষের ক্ষতি রোধ করতে গাজরের ভূমিকা অনেক। গাজর খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভেতর থেকে ভালো থাকে।এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যেগুলো ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। এমনকি ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় গাজরের রস লাগালে উপকার পাওয়া যায়। যদি চান ত্বক আরেকটু উজ্জ্বল আর লাবণ্যময় করতে চান তাহলে খানিকটা গাজর মধু দিয়ে পেস্ট করে ত্বকে লাগান। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলে দাঁত সাদা ও চকচকে হয়ে ওঠে। এছাড়া দাঁতের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গাজর চিবিয়ে খেতে পারেন। লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে অনুরোধ করছি।

নিম এর ঔষধি গুণাগুন

নিম একটি ঔষধি গাছ, । এর ডাল, পাতা, রস, সবই কাজে লাগে। নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চির হরিত বৃক্ষ। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকর।নিমের কাঠ খুবই শক্ত। এ কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এ কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও তৈরি করা হচ্ছে আজকাল। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উত্পাদন ও প্রসারকে উত্সাহ এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুত্সাহিত করছে। নিমের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষনা করেছে। নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চির হরিত বৃক্ষ।নিম গাছের পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল,বীজ। এক কথায় নিমের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়।

ঔষধি গুণাগুন:
বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে চ্যাগাস রোধ নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে,দন্ত চিকিতসায় ব্যাথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবহার:
* কফজনিত বুকের ব্যথা: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রশ সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিতে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী,শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ ঔষধটি নিষেধ।

* কৃমি: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেটে বড় হয়। চেহারা ফ্যকাশে হয়ে যায়। এ জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুড়া দিন ৩ বার সামান্য পানি গরমসহ খেতে হবে।

* উকুন নাশ: নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগান। ঘন্টা খানেক ধরে মাথা ধুয়ে ফেলুন। ২/৩ দিন এভাবে লাগালে উকুন মরে যাবে।

* অজীর্ণ: অনেকদিন ধরে পেটে অসুখ। পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস, সিকি কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল- বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যাবে।

* খোস পাচড়া: নিম পাতা সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।

* পোকা-মাকড়ের কামড়: পোকা মাকড় কামল দিলে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে।

* দাতের রোগ: নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের চাল দিয়ে নিয়মিত দাত মাজলে দাত হবে মজবুত, রক্ষা পাবে রোগ।

* জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম: নিম তেলা একটি শক্তিশালী শ্রক্রানুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম। মুখের দাগ দূর করার সব থেকে ভাল ওষুধ হল নিম৷ মুখে ব্রনের সমস্যায় ভুগছেন? চিন্তা করার দরকার নেই৷ নিম পাতার প্যাক মেখেই আপনি এর থেকে পরিত্রান পেতে পারেন৷ কি করে তৈরি করবেন এই প্যাকটা চলুন জেনে নিই৷ চার পাঁচটা নিম পাতা ভাল করে ধুয়ে মিক্সিতে পিষে নিন৷ এর মধ্যে এক চামচ মূলতানি মাটি, অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন৷ প্যাকটা যদি গাঢ় হয়ে যায় তাহলে ওর মধ্যে গোলাপ জল মিশিয়ে নিন৷ মুখে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষন রেখে দিন৷ প্যাকটা মুখে শুকিয়ে গেলে হালকা উষ্ণ জল দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন৷


থানকুনি পাতার গুনাগুন

বাংলা নাম থানকুনি। অঞ্চলভেদে এটি টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি , ধূলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Indian Pennywort, যার বৈজ্ঞানিক নামঃ Centella asiatica

থানকুনি একটি অনাবাদী ঔষধি গাছ। এটি বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে, মাঠে স্যাঁতস্যাতে জায়গাগুলোতে বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া সারা বছরই কম-বেশি পাওয়া যায়। হাতে সময় থাকলে পড়ে নিতে পারেন তুলসী পাতার যত গুনাগুন ও পাথর কুচি পাতার যত গুনাগুন।

এই গাছ পাওয়া যায় ভারত, সিংহল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে ভেষজ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে । এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিক ইত্যাদি অনেক দেশের দেশী চিকিৎসাবিদ্যায়।

আয়ুর্বেদিকশাস্ত্র মতে, থানকুনি মানব শরীরের নানা রোগ নিরাময়ের মহৌষধ। ব্যবহার্য অংশ: মূল, কান্ড , ও পাতা।

পরিচিতিঃ এই গাছটি ক্ষুদ্র লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ক্ষুদ্র গোলাকৃতির। পাতার ধারে খাঁজ রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এই গাছটিকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে উপকূলীয় লবনাক্ত আবহাওয়ায় এটি ভালো জন্মে। গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়।

বংশবিস্তার : বসন্তকালে থানকুনি লতার ফুল আসে এবং গ্রীষ্মতকালে ফল পাকে। বীজের মাধ্যমেও অঙ্গজ জনন উভয়ভাবেই থানকুনির বংশবিস্তার হয়। প্রতিটি গিট বা node থেকে শিকড় বের হয় এবং শিকড়সহ লতা এনে আর্দ্র জমিতে রোপন করলেই থানকুনি জন্মে। তবে খেয়াল রাখবে হবে যে এটি আর্দ্র মাটি পচন্দ করলেও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশের মাটি থানকুনি জন্মানোর জন্য খুবই উপযোগী হলেও নার্সারীতেও এ লতার চারা পাওয়া কঠিন। তবে গ্রামাঞ্চলে এটি সর্বত্রই পাওয়া যায়।

থানকুনির গুণাগুণ ও ব্যবহারঃ থানকুনিতে যে সকল রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে সে গুলা হলো :

» Indocentelloside

» Brahmoside » Brahminoside » Asiaticoside » Thankuniside

Read Next page

Report Page