😑

কয়েকটি তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। গতকাল থেকে মোহন ভাগবতের বক্তব্যের সমর্থনে যে যুক্তিগুলি নামছে, সেই প্রসঙ্গে- 

১/ প্রথম যুক্তি। হিন্দু ধর্ম নয়, হিন্দু সংস্কৃতি। সিন্ধুর পাড়ে থাকা সবাই হিন্দু, অতএব মোহন ভাগবত ভুল কিছু বলেননি। 

বিনীতভাবে মনে করিয়ে দিই, এই সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে। স্বয়ংসেবকগণ, আপনারা তো রাষ্ট্রবাদী, দেশের সংবিধান মানেন। 

তাহলে নিশ্চয়ই সংবিধানকে মেনে তৈরি দেশের আইনগুলিও মানেন। 

তাহলে বলুন তো, Hindu Marriage Act কি মুসলিমদের উপর প্রযোজ্য হয়? হিন্দু উত্তরাধিকার আইন কি মুসলিমদের উপর প্রযোজ্য হয়? 

দেশের আইনই বলে দিচ্ছে হিন্দু কারা! তাহলে?

 এটা তো রামকৃষ্ণ মিশনের সর্বধর্মসমন্বয়য়ের মতো হ য ব র ল হয়ে গেলো?! 

কাকে ঠকাচ্ছেন আপনারা? নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে আপামর হিন্দুদের প্রতারণা করাই কি আপনাদের কাজ?

২/ কয়েকদিন আগে বারাসাতের একটি স্কুলে এক মুসলিম মেয়েকে পুরোহিত বানিয়ে সরস্বতী পুজোর নামে একটা প্রহসন হয়েছিল, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেছিলেন, সরস্বতী পুজো মানে ভ্যালেন্টাইনস ডে, অতএব যেমন ভাবে খুশি পুজো হতেই পারে। মনে পড়ছে? 

আমি এর পাশেই মোহন ভাগবতের গতকালের বক্তব্যটি রাখছি।প্রথমটার যে কারণে বিরোধিতা করেছিলাম, দ্বিতীয়টিরও একই কারণে বিরোধিতা করছি। 

আচ্ছা বলুন তো, মুসলিমরা কোনোদিন বলেছে আমাদের মেয়েদের পুরোহিত বানাও? আমাদের হিন্দু বলে পরিচয় দাও? কোনোদিন বলেছে? 

আমরা আগ বাড়িয়ে ওদের গলা ধরতে ছুটছি। 

দেশভাগের ইতিহাস সবার জানা। আমি পুনরাবৃত্তি করবো না। শুধু বলবো, এই উগ্র ফ্যানাটিজম যারা দেখালো, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ , এই দুই দেশে হিন্দুদের উপর অকথ্য অত্যাচারের মাঝেও ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয় স্পন্সরশিপের মাধ্যমে তারা সুখে শান্তিতে আছে এবং দিনের পর দিন নিজেদের সংখ্যাও বাড়িয়ে যাচ্ছে,

এরপরেও মিত্রতার আহ্বান কাদের তরফে আসা উচিত? ওদের না আমাদের? 

ওরা আমাদের এই জোকারগিরি দেখে হাসবে। বরাবরের মতোই। ঠাট্টা করবে।আমাদের দুর্বলতা ধরে নেবে। 

আমাদের নেতৃত্ব আমাদের কাপুরুষ হতে শেখাচ্ছে। 

"জয় রাধে, ভিক্ষা দাও গো, ইহাই আমাদের পলিটিক্স!" 

বঙ্কিম সত্যদ্রষ্টা ছিলেন ভাই!

৩/ আরেকটি অপযুক্তি স্বয়ংসেবকরা মিনমিন করে বলছেন। ওদের সংখ্যা ২০ কোটি, আমরা কি ওদের ফেলে দেবো? 

২০ কোটির কী হবে, সেটা পরের প্রশ্ন। আপাতত ভাবুন, ২০ কোটি লোক বাকি ১২০ কোটিকে উপেক্ষা করে গজবা - এ - হিন্দ এর স্বপ্ন দেখতে পারে, সেই লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে পারে, 

আর আমরা?!!!! 

৪/ সবচেয়ে বড় অপযুক্তি যেটা স্বয়ংসেবকরা বলে থাকেন। 

শক হুণরা হিন্দু হয়ে গেছে, ওরাও হবে! 

উত্তর দিচ্ছি। আপনাদের ইসলাম নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। কিস্যু নেই। ন্যূনতম পড়াশোনা নেই। বলতে বাধ্য হচ্ছি। 

শক হুণদের নিজস্ব পবিত্র গ্রন্থ ছিল? নিজস্ব কনস্টিটিউশন ছিল? নিজস্ব পেনাল কোড ছিল? আগামী এক হাজার বছরে কী করবে সেই ব্লু প্রিন্ট তৈরি ছিল? 

তাদের সঙ্গে একটা আব্রাহামিক রিলিজিয়নের তুলনা? 

"The are the biggest collection of duffers that ever came together in world history"

সীতারাম গোয়েল আর এস এস সম্পর্কে কেন এই কথা বলেছিলেন, বুঝতে পারছেন তো? duffers duffere, biggest collection of duffers. 

৫/ আরেকটি যুক্তি, আমরা সনাতনী, আমরা নৃশংস হতে পারি না। 

নিজেরা ওদের জুতো চাটছেন, চাটুন, সনাতন ধর্ম নিয়ে টানাটানি কেন?গুচ্ছ গুচ্ছ উদাহরণ আছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আবার পড়ুন - 

স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি।

ধর্ম্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছ্রেয়োহন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে।। 

অথ চেৎ ত্বমিমং ধর্ম্যং সংগ্রামং ন করিষ্যসি।

ততঃ স্বধর্মং কীর্তিন্চ হিত্বা পাপমবাপ্স্যসি।। 

অথ চেৎ ত্বমিমং ধর্ম্যং সংগ্রামং ন করিষ্যসি।

ততঃ স্বধর্মং কীর্তিন্চ হিত্বা পাপমবাপ্স্যসি।। 

হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম

তস্মাদুত্তিষ্ট কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চইঃ।। 

শুধু শেষ শ্লোকটার মানে বলে দিই-

হে কৌন্তেয় ! যদি এই যুদ্ধে নিহত হও, তবে স্বর্গলাভ করবে। আর যদি বিজয়ী হও রাজ্য ভোগ করবে। 

🙂 

শ্রীকৃষ্ণ পুতনা রাক্ষসীকে কীভাবে মেরেছিলেন ভাই? মহাভারত একটু পড়ুন, খান্ডবদাহন সম্পর্কে পড়ুন। ওহ ভুলে গিয়েছিলাম , সেই সময় মোহন ভাগবত থাকলে তিনি শ্রীকৃষ্ণকেই অহিন্দু বলে দিতেন। শিবাজী রাজে আফজল খাঁকে ঐভাবে মেরে ঠিক করেননি, ফতোয়া দিতেন। 

লিনচিংয়ের গোটা দায় হিন্দুদের উপর চাপিয়ে দিলেন মোহন ভাগবত?! কোন অধিকারে? মহরমের জন্য চাঁদা দিতে অস্বীকার করা ইন্দ্রজিতের কথা তো তার ভাষণে আসে না?! 

জাতির সঙ্গে নির্লজ্জ বেইমানি এটা। Yes , I dare to say that. 

আপনারা রাষ্ট্রবাদী ঠিক আছে। সেবাকাজ টাজ করুন, বাম কংগ্রেস একরকম উপায়ে ওদের চাটে, আপনারা অন্য ভাবে চাটেন, সব ঠিক আছে। হিন্দু ধর্ম নিয়ে টানাটানি করবেন না। এই ধর্ম শাশ্বত, আপনারা আসার অনেক আগে থেকে ছিল, আপনারা বিলুপ্ত হওয়ার পরেও থাকবে। 

রাষ্ট্র্ববাদের সঙ্গে হিন্দুধর্মের কী সম্পর্ক? ভারতের বাইরেও তো হিন্দু আছে। তারা হিন্দু নয়?!!!

রাষ্ট্র আলাদা, ধর্ম আলাদা, জাতি আলাদা। আমার একমাত্র পরিচয়, আমি হিন্দু ন্যাশনালিস্ট।আর কিছু নয়।

রাষ্ট্র্ববাদ বলে, কাশ্মীরে যারা হিন্দু পন্ডিতদের তাড়িয়েছিল, তাদের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ বরাদ্দ করতে। 

হিন্দুত্ববাদ বলে না। দুটোর আকাশ পাতাল তফাৎ। 

সেবাকাজ করতে হলে আমি রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রম যাবো, যবনদের পা চাটতে হলে বাম কংগ্রেস যাবো। আপনারা কেন? 

১০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করেন তো? এবার বলুন তো, এই একশো বছরে একাডেমিক্সে আপনাদের প্রভাব কত? 

জিরো। 

কমিউনিস্টরা যথেষ্ট খেটেই একাডেমিক্সে প্রভাব বাড়িয়েছে ভাই। কংগ্রেস কমিউনিস্ট সংঘর্ষ একদা খুব কম স্কেলের ছিল না। 

এটার তাৎপর্য একটাই, দেশের সেরা ব্রেইনগুলিকে আপনারা কোনোদিনই আকর্ষণ করতে পারেননি, ভবিষ্যতেও পারবেন না। অগ্নিযুগ বা নকশাল আমল দেখা radical বাঙালি মননে কোনোদিনই প্রভাব ফেলতে পারবেন না।আমি নিশ্চিত। দায়ী আপনাদের তাত্বিক দুর্বলতা। আপনারা নিজেরাই জানেন না যে কী আপনাদের লক্ষ্য!

আবার বঙ্কিমে ফেরত যাই। 

"মরিলে যদি রণজয় হইতো, তাহলে মরিতাম।বৃথা মৃত্যু বীরের ধর্ম নয়। " 

আমি যদি সেবাকাজ করি, অবশ্যই দেখে নেবো যাকে সাহায্য করছি তার ধর্ম কী! 

ধর্ম নির্বিশেষে ফালতু সেবাকাজে নিজের জীবন তিলতিল করে নিঃশেষ করে দিয়ে হিন্দুর কোনো উপকার হয় না। যবনদের হিন্দু আখ্যা দিয়ে হিন্দুর উপকার হয় না, বরং ক্ষতি হয়।

অলমিতি। স্ক্রিনশট নিন, খাপ বসান। কিস্যু যায় আসে না।

   *কলমে - চয়ন মুখার্জি*