*/

*/

Source

প্রথমে একটি মজার তথ্য দিয়ে শুরু করছি-

কোন ব্যক্তি যদি মেডিকেল বা বুয়েট অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়। তার গ্রামের ঠিকানায় হয়ত শুধু জেলা এবং উপজেলা দেয়া আছে, বাকী ঠিকানা নেই। এই ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার এই লোকের স্থায়ী ঠিকানা বের করতে যত সময় লাগবে তার থেকেও চার ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন শিবিরের কাছ থেকে। না কোন মোবাইল ট্রাকিং ব্যাবস্থা ছিলো না যখন, তখনও পারতো তারা। কারন উপজেলা শিবিরের তথ্যভান্ডার আছে সেই সংগঠনের শুরু থেকেই। উপজেলার কোন ছাত্র যদি এসব জায়গায় পড়ে, তবে তাদের সকল তথ্য শিবির সংগ্রহ করে রাখে। তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা কতটুকু তাই বুঝে নিন। বিশ্বাস না হলে নিজেরাও এলাকায় গিয়ে খোজ নিতে পারেন।

জামাতে ইসলাম হল মুল সংগঠন। এখানে কর্মি,রোকন বা আমির আসে মুলত দুইটি অংগ সংগঠন থেকে। এই দুটি সংগঠন হল -

# ইসলামী ছাত্র শিবিরঃ - ক্লাস এইট থেকে পিএইচডি পর্যন্ত, অবশ্যই ছাত্র হতে হবে।
শিবিরে কেউ চাইলেই প্রবেশ করতে পারে না। একটা প্রসেসের মধ্যমে আসতে হয়। একজন প্রথমে দাওয়াত প্রাপ্ত হতে হবে। তারপর সমর্থক হিসেবে শপথ নিবে। এর পর তাকে কিছু দৈনন্দিন কাজের দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। এবং সে অন্তত তিন মাস অবজারভেশনে থাকবে। তিন মাস পরে কর্মি হবার জন্য আবেদন করবে। আবার তিন মাস সময় দেয়া হবে স্পেসিফিক কিছু পড়াশোনা করার জন্য। তারপর মৌখিক পরিক্ষায় পাস করলে সেই ব্যাক্তি কর্মি হিসেবে পরিচয়পত্র পাবে এবং শপথ নিবে। কর্মি থেকে সাথি পদে যেতেও একি ধরনের সময় দিয়ে, পরিক্ষার মাধ্যমে সাথি হবার যোগ্য হতে হবে। সেখানেও শপথ নিতে হবে সাথির জন্য। সাথি থেকে সদস্য পদ পাওয়া একটু কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। এই সময়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে, তাদের দেয়া বই গুলোর উপর। তাকে লিখিত ও মৌখিক দুই পরিক্ষাতেই পাস করতে হবে। সদস্য হল শিবিরের মুল পরিচালনায় নেয়ার যোগ্যতা। সদস্য ছাড়া শিবিরে বড় পদ পাওয়া যাবে না।

ইসলামি ছাত্রী সংস্থা নামে একটি সংগঠন আছে এদের, তবে তা শিবির কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত শুধু মাত্র ছাত্রীদের জন্য।

# ইসলামি সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনঃ - এখানেও একি প্রসেস তবে পার্থক্য হল, অশিক্ষিতদের জন্য এই সংগঠন হলেও মুলত পরিচালনা কমিটির সকলে শিবিরের সদস্য থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত।

শিবির বা সমাজ কল্যান ফেডারেশনের সাথি থেকে সদস্য পর্যন্ত সকলেই স্থান, এলাকা ও দায়িত্ব নির্ভর করে মাষিক বেতন পায় সংগঠন থেকে। এছাড়াও যাদের সামর্থ্য নেই তারা কর্মি থেকেই পড়াশোনা, থাকা ও খাওয়ার সকল ব্যবস্থা সংগঠন থেকে পেয়ে থাকে। আর ধনীদের ক্ষেত্রে মাষিক চাদা নেয়া হয়, তাদের পারিবারিক সামর্থ্য অনুযায়ী।

শিবিরের আরেকটি তথ্য হল কোন ছাত্র যদি খুব মেধাবী হয়, তবে সে যতদুর ইচ্ছে পড়ালেখা করাবে শিবির। তার পরিবারের প্রয়োজন হলে, পরিবারেরও দায়িত্ব নিবে। টার্গেট হল তাকে দেশের বড় কোন স্থানে সেট করে দেয়া।

শিবিরের ছেলেদের সরকারি চাকুরীর জন্য ঘুসের প্রয়োজন হলেও তা শিবির থেকে দেয়া হয়।

জামায়েতে ইসলাম, শিবির এবং সমাজ কল্যান ফাউন্ডেশন যদিও পাকিস্তানের শাইখ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর ভাবধারা ও আদর্শকে কেন্দ্র করে যাত্রা শুরু করে তবে বর্তমানে এই তিনটি সংগঠনই কালের পরিক্রমায় নিজেরাই একধরনের প্রফেশনাল সংগঠন হয়ে দাড়িয়েছে। অনেকের একটা ধারনা যে, এদের এত বিশাল টাকার উৎস হল পাকিস্তান। তবে এটা হয়ত শুরুতে ছিলো, এখন তারা নিজেরাই যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ আর্থিক ভাবে। দেশের বহু নামে বেনামে স্টাবলিস্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক এরা। এসব প্রতিষ্ঠান হয়ত সরকারকে ফাঁকি দেয়ার জন্য বিভিন্ন নামে ও মালিকের দ্বারা পরিচালনা করা হয়। তবে এর আয়ের প্রায় সব টুকু যায় সংগঠন গুলোতে। এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এদের প্রচুর অর্থ আসে।
সকলেই অবাক হবেন, দেশের মধ্যে অবস্থিত অন্য সকল দেশের এম্বাসির সাথে এদের সম্পর্ক খুব ভালো। ২০১৫ সালে ভারত দুতাবাসের একটি গাড়ি হরতাল চলাকালীন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জামাত সেই সময় ভারতীয় দুতাবাসকে একটি ব্রান্ড নিউ গাড়ি উপহার দেয়।

এই তিনটি সংগঠন এমন ভাবে পরিচালিত হয় যে, অনেকেই বলে দেশের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা দুরের কথা ভারতের র পর্যন্ত এদের তুলোনায় কম শক্তিশালী।

শিবিরে কেউ কখনো নিজের সিদ্ধান্তে অন্য কোন দলের কর্মির গায়ে হাত তুলবে না। কাউকে মারতে হলে বা কোন দিন রাজপথে গন্ডগোল করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে অনুমতি দিতে হয়। একজন আওয়ামীলীগের কেউ যদি একা এক হাজার শিবিরের মাঝে দাড়িয়েও থাকে তবে তাকে কেউ মারবে না বা হেনস্থা করবে না। অবশ্যই তাদের উপর লেবেল থেকে নির্দেশ আসতে হবে।

শিবিরের ছেলেরা কোন মামলায় গ্রেফতার হলে উকিল থেকে শুরু করে আদালত বা জেলখানা পর্যন্ত সকল দায়িত্ব ও খরচ দিবে শিবির। এমনকি জেলের মধ্যে তাদের আসামীর সকল খরচ তারা দেয়। শিবিরের কোম ছেলেকেই অর্থ অভাবে জেলে কষ্ট করতে হয় না। জেলখানার পিসিতে সব সময় তাদের জন্য টাকা দেয়া থাকে। নিম্ন আদালত থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত এই তিন সংগঠনের কোন নেতা বা কর্মিকে তাদের মামলার জন্য একটি পয়সা খরচ করতে হয় না। তাদের কেউ প্রতিপক্ষের হাতে খুন হলে, সেই মামলাও তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যায়। এসব করে মুলত সংগঠনের প্রতি কোন নেতা বা কর্মির যেন হতাশা কাজ না করে। একজন নেতা বা কর্মি যেন সংগঠনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে।

এত কিছু লিখলাম, সাদা চোখে সবই হঠাত ইতিবাচক মনে হবে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে যখনি আপনি তাদের প্রতিপক্ষ হবেন, তখন এদের বিভৎস রুপ বেড়িয়ে আসবে।

আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, শিবির একটি মারাত্মক অসনি সংকেত বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য। এরা ধীরে ধীরে প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি নীতিনির্ধারকদের মাঝে নিজেদের প্রবেশ করাচ্ছে এখন পর্যন্ত। ২০০৮ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত সরকারি চাকুরী ১ম, ২য়, ৩য় এমনকি ৪র্থ শ্রেনীতে গড়ে তাদের ছেলেরাই বেশী চাকরি পেয়েছে।

শিবির খুব ভালো করেই জানে আওয়ামিলীগের নেতাদের কেনা যায়। এর বড় প্রমান হল - ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দুটি সভা। সেখানে প্রতিটি স্থানীয় নেতা, সরাসরি অভিযোগ করে নেত্রীর কাছে যে - এলাকায় তাদের ছেলে মেয়ে বা ছাত্রলীগের ছেলেদের চাকরি হচ্ছে না। স্থানীয় এমপি সুপারিশ করে না। গেলেই এইটা সেইটা বলে অযুহাত দেখায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখা যায়, শিবির বা ছাত্রদলের কারো উক্ত চাকরি হয়ে গেছে এবং তাদের চাকরির জন্য ডিও লেটার স্থানীয় এমপি সাহেবই দিয়েছে। সেই সময় নেত্রী অবশ্য কথা দিয়েছিলো অন্তত দুইশত এমপির নমিনেশন বাতিল করে নতুন এমপি দিবেন৷ যদিও তিনি পরবর্তীতে এই অভিযোগের ভিত্তিতে একজন এমপিকেও বাদ দেন নাই।।

আমাদের বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামিলীগের মধ্যে একটা হাস্যকর টেনডেন্সি আছে। মতের অমিল বা ব্যাক্তিগত শত্রুতা থাকলেই একজন সাধারণ মানুষের পিঠে আমরা খুব সহজেই জামাত শিবিরিরের ট্যাগ মেরে দেই। এর মুল কারন হয়ত, আমরা জানিই না যে জামাত শিবির এত সোজা কিছু নয় অন্য কোন সংগঠনের মত যে - একদিন মিছিল বা মিটিং করলেই আওয়ামিলীগ বা বিএনপির মত হুট করে জামাত শিবির হওয়া যায়। ফলাফল কি হয়, ভিকটিম ছেলে বা মানুষটি হয়ত আগে আওয়ামিলীগকে অত ঘৃনা আগে না করলেও, এর পর থেকে করা শুরু করে। আর এই সুযোগটা শিবির নিয়ে নেয়। উক্ত ব্যাক্তিকে তাদের পক্ষে ব্যবহার করে। এমন অনেক দেখেছি ছাত্রকালিন সময়ে, হলে একজন তার বন্ধুকে তুলবে তাই তার রুমমেট অসহায় ছেলেটিকে শিবিরের ট্যাগ দিয়ে অতিউৎসাহী কিছু ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছে। অথচ ছেলেটির হয়ত বাহীরে থেকে পড়ার সামর্থ্যই নেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই অত্যাচারটি হয় অতি অসহায় ও দরিদ্র ছেলেদের সাথে। ফলাফল হয় কি, এই ছেলেটিকেই শিবির তাদের ছত্রছায়ায় আশ্রয় দেয়। এবং দিন শেষে ছেলেটি শিবিরের পক্ষে কাজ করা শুরু করে।

ক্যাম্পাসেও অনেক অসহায় ছেলেকে সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত রেষারেষি থেকে সাধারণ ছাত্রকে শিবির বানিয়ে নাজেহাল করার অসংখ্য উদাহরণ আছে৷

শিবির বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যান্ত ভয়ংকর একটি সংগঠন। এরা কি পরিমানে নৃশংস ঘটনার জন্ম দিতে পারে তা সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না৷ অত্যন্ত সুস্থ মাথায় এরা বিপক্ষের মানুষদের খুন করে, প্লান করে।

বাংলাদেশে সকল ছাত্র রাজনৈতিক দল গুলো এখন পর্যন্ত মোট যত গুলো হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের, তার যোগফলের দ্বিগুন ছাত্র একমাত্র শিবিরের হাতেই খুন হয়েছে। শিবির ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের মত মাথা গরম করে কোন হটকারিতায় সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা বিরোধী সংগঠনের কোন ব্যাক্তিটিকে মারলে সংগঠনের বড় ক্ষতি হবে, সাংগঠনিক শক্তি হ্রাস পাবে তা স্টাডি করে ধীরে সুস্থে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। সিনেমার সিরিয়াল কিলারের মতই তাদের হত্যাকাণ্ড গুলো হয়।

একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে - আওয়ামিলীগ ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসলো ২০০০ সালে, তখন এক রাতেই ক্ষমতার পালাবদলে হাজার হাজার ছাত্রলীগের থেকে মাত্র বিশ বাইশজন ছাত্রলীগের নেমে আসলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ। সেই সময় ক্ষমতার পালাবদলের কারনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুইজন অভিভাবক মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাসির দুজনেই নিজারাই বিপদে। আমাদের সাহায্য করবে কি করে। কেউ নেই আমাদের পাশে দাড়াবার। শুধু মাত্র মুর্তজা ভাই আছেনে ছড়ারকুলে। আমাদের ছাত্রলীগের এক মাত্র আস্থার স্থান। মুর্তজা ভাই এমন একজন ব্যাক্তি, যে জীবনে আমার জানা মতে কারো গায়ে হাত দুরের কথা রুক্ষ ভাষায় কথাও বলতেন না। অসম্ভব ইন্ট্রভাট চরিত্রের ছিলেন তিনি৷ ছাত্রলীগের কোন ছেলেকে সহযোগিতা করলে, আড়ালে নিয়ে গিয়ে দিতেন। অন্য নেতাদের মত সকলের সামনে টাকা বেড় করে দিয়ে হিরো হতেন না৷ তিনি তার এলাকায় কি পরিমানে জনপ্রিয় ছিলেন তা আজকে বিশ বছর পরে গেলেও বুঝতে অসুবিধা হবে না কারোই।

তখন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি মাত্র বিশ বাইশজন। আমাদের কারোই থাকা খাওয়ার জায়গা পর্যন্ত নেই৷ মুর্তজা ভাই যতটুকু সম্ভব আমাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন।
সেই সময়ে শিবিরের আমাদের ছাত্রলীগের অনেক নেতা কর্মির উপর সরাসরি ক্ষোভ ছিলো। শিবির আমাদের অনেককেই তখন টার্গেট করে মারতে পারতো, সেই অর্থে মুর্তজা ভাইয়ের উপর ক্ষোভ থাকার কথা নয়। কারন মুর্তজা ভাই কোন দিনই শিবিরের কারো গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেন নাই। অথচ শিবির সবাইকে বাদ দিয়ে, মুর্তজা ভাইকেই দিনেদুপুরে তার নিজ এলাকাতেই নৃশংস ভাবে হত্যা করলো। বুক ঝাজড়া করে দিলো একে৪৭ দিয়ে। আমরা যারা তার লাশ দেখেছি, তারা জানি কতটা নির্মম ছিলো সেই দৃশ্য। মনে হল, শুধু মুর্তজা ভাইকে হত্যা করাই উদ্দেশ্য ছিলো না, তারা একটি ভয় ছড়ানোর উদ্দেশ্য ছিলো। শিবির ছাত্রলীগ ও স্থানীয় জনগন এবং প্রশাসনের কাছে ম্যাসেজ দিয়েছিলো - একজনকে হত্যা করেই৷ মুর্তজা ভাইয়ের মত এত জনপ্রিয় মানুষটিকে তার নিজের এলাকায় এভাবে হত্যা করে বুঝিয়ে দিলো - তারা এখন যাকে ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছে মারার ক্ষমতা রাখে। সব থেকে বড় ক্ষতি হল আমাদের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের মেরুদণ্ডই ভেঙে দিলো সেদিন। মাঝখান দিয়ে, আমাদের একমাত্র ভরসা মুর্তজা ভাইকে হারালাম।

শিবির সন্ত্রাসী সব কাজ অত্যান্ত পরিকল্পনা নিয়ে করে। তারা যেদিন আক্রমণ চালায় সেদিন তাদের প্রস্তুতি হয় একদম অন্যরকম এবং দুর্ধর্ষ। তারা কখনোই কেন্দ্রীয় পর্যায়ের থেকে ক্লিয়ারেন্স ছাড়া গন্ডগোল করে না৷ যেদিন তারা আক্রমণ করে, তাদের অস্ত্রের মজুদ প্রশিক্ষিত যেকোনো বাহিনীকে টক্কর দেয়ার মত হয়। তবে আকষ্মিক গন্ডগোলে তারা সব সময়ই সম্পূর্ণ পরাস্ত হয়েছিলো আমাদের সময়। তাদের ঘায়েল করার একটা সহজ উপায় হল, হঠাত তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়া।
জামাত শিবিরের বর্তমানঃ

আমাদের ঢাকা শহরের বড় বড় নেতা বা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে হাওয়া লাগায় বেড়াচ্ছে এই ভেবে যে, জামাত শিবির তো শেষ। তাদের বড় নেতাদের তো ঝুলিয়েই দেয়া হয়েছে। তাদের এই আত্মতুষ্টি দেখে হাসিই পায়, কারন তারা জামাত শিবির কি জিনিস তা জানেই না নিশ্চিত। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়া এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিবিরের বিরুদ্ধে রাজনীতি করেছে তারা জানে শিবির কি ভয়ংকর দেশদ্রহী সংগঠন। যাদের নেট ওয়ার্ক এর শেকর এখন আরও প্রসারিত হচ্ছে নিরবে।

জামাত বা শিবির ভুলেও হেফাজতের মত ছন্নছাড়া সংগঠনে নিজেদের জড়িত করবে না। তারা হেফাজতের বিষয়ে একটাই কাজ করে সম্ভবত, কোথাও কোন গন্ডগোল হলে শিবিরের ছেলেরা তান্ডব এর ভয়াবহতা বাড়াতে অংশ নেয়। তারা জানে এইকাজে দুই পাশেই তাদের লাভ। যা হবে হেফাজতের উপর দিয়ে যাবে। মাঝে আওয়ামীলীগ প্রেসারে থাকবে৷

কোটা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাই। শিবির সরাসরি জড়িত নয়। এমনকি মোটামুটি নিশ্চিত নুরুর সাথে শিবিরের নুন্যতম যোগাযোগ নেই। কারন এই পর্যন্ত নুরুকে অন্তগ আট দশবার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তুলেছে। নুরু একা নয় তার সম্পূর্ণ ফ্যামিলি ২৪ ঘন্টা গোয়েন্দা সংস্থার সার্ভিলেন্সে থাকে। নুরু ও তার আশেপাশের চার পাঁচ জনের মোবাইল চব্বিশ ঘন্টা সার্ভিলেন্সে থাকে। এখন পর্যন্ত জামাত শিবিরের সাথে সম্পর্ক আছে এমন একটি নুন্যতম তথ্যও পাওয়া যায় নাই। তবে নুরুর সাথে গন্ডগোলের সময়, আশ্চর্যজনক ভাবে আশ পাশ থেকে হঠাত করেই চল্লিশ পঞ্চাশজন চলে আসে। আমি অন্তত দুটো ঘটনা স্বচোক্ষে দেখেছি - আমার কাছে এদের কখনোই ঢাকার কোন ছাত্রসংগঠনের ছেলে মনে হয় নাই। বরং আমাদের মত যারা প্রতিনিয়ত শিবিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি তারা এসব ছেলের বডি ল্যাংয়েজ দেখলেই বুঝে যাবে, এসব শিবিরের ছেলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ শহরের মাস্তান তো অনেক দেখেছি, তাদের সাহসও দেখা আছে৷ সম্পূর্ণ নিরাপদ পরিবেশে এরা একেকটা বিশাল বাঘ। একটু বেকায়দায় পড়লেই প্যান্ট ভিজে যাওয়াও দেখেছি। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, দৈনিক পেপাড়ে আসা মাস্তানও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-শিবিরের মারামারি দেখে রীতিমতো প্যান্টে প্রসাব করে দেয়ার নজিরও আছে।

নুরুর সাথে ছাত্রলীগের কোটা আন্দোলনের সময়, যখন মারামারি চলছিলো, তখন দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি -সেক্রেটারি সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সম্পূর্ণ ইউনিট কে মাত্র চল্লিশ পঞ্চাশটা ছেলে কিভাবে দৌড়ায় দৌড়ায় পিটাচ্ছিল। নুন্যতম প্রতিরোধ করার সাহস পর্যন্ত পায় নাই। এই রকম প্রফেশনাল ক্যাডার এক মাত্র শিবিরের ছেলেদের দ্বারা সম্ভব। মারামারি শেষ হলেই এই ছেলে গুলো সাধারণ ছেলেদের সাথে মিশে যায়। এদের ট্রেস করা যায় না।

সরকার এবং প্রশাসন সব থেকে বড় ভুল যেটা বর্তমানে করছে তা হল - চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন সভাপতি পরবর্তীতে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুকে ঢাকায় রাজনীতি করার জন্য ছেরে রেখেছে। যদিও সে নতুন একটি রাজনৈতিক সংগঠন বানিয়েছে এবং বলছে যে জামাত থেকে সে পদত্যাগ করেছে। আমার কাছে এটা আওয়ামিলীগের অন্যতম একটি ভয়ংকর ভুল ধারণা যে, মঞ্জু জামাত থেকে বেড় হয়ে গেছে। আমি যতটুকু জানি, জামাতের থেকে পদত্যাগ করে অন্য দলে গিয়ে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। মঞ্জু এমন সব দায়িত্বে ছিলো যে, সে শিবির ও জামাতের জন্য বড় ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে৷ জামাত এত সহজে এত বড় ঝুকি নিবে না। জামাত শিবিরের ইতিহাস বলে, মঞ্জু সত্যি যদি বেড় হয়ে যায় তবে, তাকে শিবিরই জীবিত থাকতে দিবে না।

হেফাজত হয়ত লাফাবে, এইটা সেইটা ভাংচুর চালাবে কিন্তু মঞ্জুর নেত্রীত্বে যে এবি পার্টি প্রতি সাপ্তাহে ঢাকায় মিটিং করে সংগঠিত হচ্ছে, এইটা বড় এলার্মিং। আগামীতে আওয়ামিলীগকে বড় ক্ষতি এই সংগঠনটি করার সম্ভবনা সব থেকে বেশী। এই এবি পার্টিতে মঞ্জু ছাড়াও শিবিরের যে কয়জন আছে, সব গুলোই ১৯৯৬-২০০৪ সময় পর্যন্ত শিবিরের ক্যাডার লাইনের একেকজন ফ্রান্ট লাইনার ছিলো। বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিবিরের অস্ত্রের মুল যোগান দাতাও এরাই ছিলো তা আমার থেকে ভালো জানে আমাদের চট্টগ্রামের বড় ভাইয়েরা। মুর্তজা ভাইয়ের হত্যা সহ চট্টগ্রামের এইট মাডার সহ যেসব উল্লেখযোগ্য হত্যা কান্ড হয়েছিলো সেই সময়ে, তাদের মুল মাস্টার মাইন্ড হিসেবে যাদের সন্দেহ করা হয় সকলেই এখন এবি পার্টিতে।

এই এবি পার্টি নিরবে খুব গুছিয়ে ঢাকায় শেকড় গাড়ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। জামাত শিবির এত সহজে ছাড় দেয়ার সংগঠন নয় তা হয়ত আওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকেরা জানেও না। আর প্রশাসনের উচিত আরেকটু ভালো করে জামাত শিবির নিয়ে স্টাডি করা।
দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, বুয়েট সহ পাব্লিক ইঞ্জিনিয়ারিং সকল বিশ্ববিদ্যালয় এখনো অপ্রকাশিত ভাবে শিবিরের আধিপত্য সুসংহত।

ছাত্রলীগের বিশেষ করে ২০১২ পরে যারা শুরু করেছে রাজনীতি তাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ, হুট করে ব্যাক্তি স্বার্থে অথবা ভিন্ন মতের হলেই, তাকে জামাত শিবির বলে হেনস্ত করিও না। এগুলো বরং নিজের ও সংগঠনের জন্য সুদুরপ্রসারি ক্ষতি নিয়ে আসবে। জামাত শিবির এত সহজ জিনিস নয়। এদের জানতে হলে চোখ কান খোলা রেখে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে যেতে হবে। বিশেষ করে নিজেদের গ্রুপিং মারামারিতে অতি উৎসাহী কেউ থাকলে তাকে নজরে রাখো। গ্রুপিং এর গন্ডগোলে তার এত উৎসাহ কেন, এটা খুজার চেষ্টা করো। দেখবে, ছাত্রলীগের মধ্যেই ঘাপটি মেরে থাকে, কোন কিছুতেই তেমন আগ্রহী নয়। কিন্তু গ্রুপিং গন্ডগোলের সময় খুব সক্রিয় ভাব দেখাবে।

আর একটি কথা, ছাত্রলীগের মধ্যে যে সমালোচনা করে সে কখনোই শিবির নয়, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি৷ যারা অনুচর হিসেবে থাকে তারা কখনো গলা উচা করে না, এসব সামান্য সমালোচনা করতে গিয়ে। বরং তারা তোষামোদি করে নেতাদের সংস্পর্শে থাকে সব সময়, ছাত্রলীগ কি করছে তার সংবাদ যেনো সবার আগে যোগার করতে পারে, সেই কাজই করে তারা৷

আওয়ামিলীগে থেকে আওয়ামিলীগের সমালোচনা কারীকে যারা জামাত শিবিরের ট্যাগ দেয়, তাদের রাজনৈতিক মেধা আমার মতে শুন্যের কোঠায়।।

বিএনপি বা অন্য কোণ রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামিলীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতে পারে, তবে জামাত-শিবির আগামীতে আওয়ামিলীগ অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে এবি পার্টি ঢাকায় এত অবাদ চলাচল নেত্রীর জীবনের জন্যেও হুমকি হতে পারে। কারন এর এবি পার্টির মূল হোতা সব গুলোই কিন্তু জামাত শিবিরের ক্যাডার লাইনের মুল সিন্ডিকেট ছিলো।

আর একটি ভয়াবহ তথ্য হল - ২০১৪ এর পরে শিবিরের এখন একমাত্র টার্গেট বিসিএস, ১ম ও ২ য় শ্রেনীর সরকারি চাকুরীতে নিজেদের ছেলেদের যেভাবে সম্ভব প্রবেশ করানোর। তারা ভালো করেই জানে, টাকা দিলে আওয়ামিলীগ ছাত্রলীগের ছেলেকেও লাথি দিয়ে, শিবিরের ছেলেদের চাকরি দিবে এবং দিচ্ছে।।

শিবির বিষয়ে আওয়ামিলীগ যদি এখনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিরিয়াস না হয় তবে, যে ড্যামেজ তৈরি হবে তা সামাল দেয়ার ক্ষমতা বা সময় কিছুই থাকবে না। এরা একটি মরন কামড় দেয়ার জন্য আটঘাট বেধে তৈরি হচ্ছে আমাদের আশেপাশেই , আমরা শুধু আত্মতুষ্টিতে ডুবে আছি।

জামাত শিবির এখন অত্যন্ত সুকৌশলে আওয়ামিলীগ ও প্রশাসনকে হেফাজত নামক থার্ডক্লাস সংগঠন ও নুরুর মত পার্সোনালিটি লেস বিষয়ে ব্যাস্থ রাখছে। আমদের অনেক ছাগলও এই দুই সংগঠনে সারাদিন জামাত শিবির খুজে যাচ্ছি।।

© রাশেদ আলম

Report Page