*/

*/

Source

বিবিলিক্যাল বা জুইশ টেক্সটগুলো খুব ক্লোজলি পড়লে একটা থিম বারবার ঘুরে ফিরে আসতে দেখা যায়।

Satan বা শয়তানকে যেন প্রায় জোর করে ভিলেন বা অশুভ শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু খুব নিবিড় বিশ্লেষণে শয়তানের তেমন কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া যায় না।

হ্যাঁ, শয়তান ছিলো প্রচন্ড দাম্ভিক। একজন সাধারণ জ্বিন থেকে সে ফেরেস্তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পেরেছিলো। তাই নিজের ক্ষমতার দম্ভে সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক সময় নিজেকে সে ঈশ্বরের সমান ক্ষমতাধর ভাবতে শুরু করে। স্বয়ং ঈশ্বরকেই সে চ্যালেঞ্জ করে বসে।

এই চরম আত্মঘাতী অহংকার ছাড়া শয়তানের আর কি কি দোষ আছে? বাইবেল বা জুয়িশ টেক্সটে দেখানো হয় যে শয়তান বারবার মানুষকে পাপ কাজে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

জুয়িশ টেক্সট অনুযায়ী গার্ডেন অভ ইডেনে দুই ধরনের গাছ ছিলো। ট্রি অভ লাইফ এবং ট্রি অভ নলেজ। ঈশ্বর চেয়েছিলেন আদম যেন ট্রি অভ লাইফের ফল ভক্ষণ করে। ট্রি অভ লাইফের ফল খেলে আদম হয়ে যেতেন অমর, এবং তার বংশধরেরা আজীবন স্বর্গেই থাকতেন। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় আদম ফল খেলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ট্রি অভ নলেজ থেকে। এই নিষিদ্ধ জ্ঞানফল ভক্ষণ করায় তিনি হয়ে গেলেন অভিশপ্ত। ঈশ্বর তাকে ছুড়ে ফেললেন স্বর্গ থেকে।

প্রশ্ন হলো ট্রি অভ নলেজ কেন নিষিদ্ধ?

ঈশ্বর কেন জ্ঞানফল মানুষের জন্যে নিষিদ্ধ করবেন?

বলা হয়ে থাকে জ্ঞানফল ভক্ষণ করায় আদমের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। সে নিজের জন্য স্বাধীন ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে শেখে। মানবজাতি যে রোবটের মত কেবল ঈশ্বরের হুকুম পালন না করে নিজের খেয়াল খুশি মতো চলতে পারে সেটা হয়েছে আদমের জ্ঞানফল ভক্ষণ করার কারণেই।

ঈশ্বর কি তবে অন্ধ অনুগত একটা মানবজাতি চেয়েছিলেন?

আদমকে জ্ঞানফল খেতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শয়তান কি তবে মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার এনে দেয়নি? শয়তানের কারণেই কি আমরা আজ মুক্ত স্বকীয় চিন্তাভাবনার সুযোগ পেয়েছি?

শয়তানের আরেক ভার্সনের নাম আজাজিল। আজাজিল মানুষকে স্বর্গের জ্ঞান শিখিয়েছিল। মানুষকে শিখিয়েছিল কিভাবে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, কিভাবে অস্ত্র বানাতে হয়, যুদ্ধ করতে হয়। এই নিষিদ্ধ জ্ঞান মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য আজাজিল অভিশপ্ত হয়ে পড়ে, কেয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে আজাজিলের শাস্তি। এখানেও আমরা দেখছি মানুষকে জ্ঞান বিতরণ করাটা ঈশ্বরের পছন্দ না। কিন্তু কেন? ঈশ্বর কি ভাবছেন স্বর্গের জ্ঞান ধারণ করার মতো চেতনা মর্ত্যের মানুষের নেই? মানুষ এই জ্ঞান খারাপ কাজে লাগাবে? উল্টাপাল্টা জ্ঞানের প্রয়োগ করে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে? নাকি এই জ্ঞানের মাধ্যমে ঈশ্বরের স্বরুপ উন্মোচিত হয়ে যাবে? মানুষ তখন একই ভাবে বিদ্রোহ করে বসবে.. যেমনটা শয়তান করেছিলো?

আর্লি জুইশ টেক্সটগুলো আবার গ্রিক মিথোলজি দ্বারা অনেক প্রভাবিত। মানুষকে সাহায্য করার জন্য প্রমিথিউস মাউন্ট অলিম্পাস থেকে আগুন চুরি করে এনেছিল। আর সেজন্যে তাকে জিউস এর রোষানলে পড়তে হয়েছিল। এই গ্রিক মিথের সাথে কিন্তু আজাজিলের স্বর্গের গুপ্তবিদ্যা মানুষকে শিখিয়ে দেয়ার অনেক মিল আছে।

তো এসব গল্পে ঘুরেফিরে একটা থিম বারবার আসছে। সেটা হলো শয়তান বা আজাজিল চাইছে মানুষকে জ্ঞানের সন্ধান দিতে। আর ঈশ্বর চাইছেন মানুষ যেন খুব বেশি জ্ঞানলাভ না করে। খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করে।

আমার ধারণা আগেকার দিনে চার্চের উপাসকরা এসব গল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জ্ঞানচর্চা তথাপি মুক্তচিন্তায় অনুতসাহিত করতো। কারণ খুব বেশি বিজ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া করলে চার্চের অন্তঃসারশূন্যতাগুলি প্রকাশ হয়ে যায়। তাই ধর্মের ঠিকাদাররা সব সময়েই চেয়েছে মানুষকে জ্ঞানলাভ থেকে দূরে রাখতে।

ইসলামের শুরুটা ছিলো অন্য রকম। এই ধর্মে জ্ঞানার্জনকে উৎসাহিত করা হত। জ্ঞানচর্চাকে উপাসনার সমতুল্য ভাবা হতো। কিন্তু সেই স্বর্ণযুগ খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ইসলামের মালিকানা চলে গেছে কিছু ধর্মবেশ্যার হাতে। তারা আবার জ্ঞানচর্চাকে নিরুৎসাহিত করেছে। নানারকম অদ্ভুত নিয়মকানুন আবিষ্কার করে মানুষের মুক্ত চিন্তাভাবনার পথ অবরোধ করেছে।

শেষ করার আগে একটা মজার তথ্য বলে যাই যা আমার মনে হয় বেশির ভাগ মানুষের অজানা। কুরআন শরীফে বর্নিত প্রায় আশিভাগ গল্পই বাইবেল এবং ওল্ড টেস্টামেন্টে লেখা আছে। খুব কম মানুষই আছে যারা কুরআন শরীফ, বাইবেল এবং ওল্ড টেস্টামেন্ট তিনটাই পড়েছেন। তিনটা বইতে ঘুরেফিরে একই কথাই বলা হয়েছে। ভাষা আর সময়ের ব্যাবধানে যা-কিছু পরিবর্তন, এই আর কি।

Report Page